রক্ষণাবেক্ষণ ত্রুটিতেই প্রাণঘাতী এসি!

গরমের তীব্রতা কাটিয়ে একটু আরামের জন্য বাসাবাড়ী বা অফিসে ব্যবহার করা হয় এয়ার কন্ডিশন (এসি)। অথচ সাম্প্রতিক সময়ের বেশকটি ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে- ব্যবহারে অনিয়ম কিংবা সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই এসিই হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী।

বর্তমান সময়ে এসি কারো জন্য আরাম-আয়েশের মাধ্যম আবার কারো কারোর জন্য হয়ে উঠছে ভয়ংকরও। রাজধানীর শনির আখড়ায় এক্সিম ব্যাংকের এসি বিস্ফোরণের ঘটনাসহ সাম্প্রতিক সময়ের বেশকটি ঘটনায় দেখা যাচ্ছে- অতীতের তুলনায় বর্তমানে এসি দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। বর্তমান সময়ে এসি যেন এক আতঙ্কের নাম। ব্যবহারে একটু অনিয়ম হলেই এসি বিস্ফোরিত হয়ে কেড়ে নিচ্ছে মানবপ্রাণ।

এসিতে প্রাণহানির ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটছে এসির বিস্ফোরণ। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। সম্প্রতি রাজধানীর শনির আখড়ায় এক্সিম ব্যাংকের এসি বিস্ফোরণে এক ব্যবসায়ী নিহত ও তিনজন আহত হন।

 

এ ঘটনার জেরেই এসি দুর্ঘটনার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত ২৬ মে গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ি এলাকায় একটি সোয়েটার কারখানায় এসির বিস্ফোরণে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়। ২৫ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী মারা যান। এছাড়াও ২০১৭ ও ২০১৬ সালে একাধিক এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় বেশকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এসিতে কেন বিস্ফোরণ ঘটে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ড. মহম্মদ আলি বলেন, এসির মধ্যে কমেপ্রসার থাকে। এই কমেপ্রসারের গ্যাসের প্রেসার লেভেলের দুটি লিমিট থাকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন। প্রেসার সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করলে এসি বিস্ফোরিত হতে পারে।

তিনি বলেন, এসির মধ্যে গ্যাস দেওয়া হয়। এটি দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে না। কিন্তু কোনও কারণে বিস্ফোরণ প্রতিরোধের জন্য যেসব সেন্সর থাকে, সেগুলো কাজ না করলেও এসি বিস্ফোরিত হতে পারে।

যে কারণে এসব সেন্সরসহ এসির যাবতীয় যন্ত্রাংশ সব সময়ই নজরদারিতে রেখে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি করা উচিত। তাহলেই এসি দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এসি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের বিকল্প নেই বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, এসির নিয়মিত সার্ভিসিং খুবই জরুরি। একই সঙ্গে এসি সবসময় চালুও রাখা যাবে না।

এসি বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানে না বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, কেন বিস্ফোরণ ঘটে, এটা যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। আমরা এ বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞ নই। শনির আখড়ায় কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসি বিস্ফোরণের কারণ নিয়মিত সার্ভিসিং না করা। সার্ভিসিং না করায় পানি ও গ্যাস জমে যায়। তখন বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বলেন, সার্ভিসিং করালেও অনেকে ভালো টেকনিশিয়ান দিয়ে সার্ভিসিং করান না। তাই এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে সবাইকে।

এসি বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ডিএমপি ৭টি বিষয়ে নজর রাখতে আহ্বান জানিয়েছে। প্রথমত ২৪ ঘণ্টা এসি চালু না রাখা। দীর্ঘ সময় চালু থাকলে এসির যন্ত্রপাতি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। এজন্য মাঝে-মাঝে এক-দুই ঘণ্টা এসিকে বিশ্রাম দিতে হবে। বছরে অন্তত একবার প্রফেশনাল টেকনিশিয়ান দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করাতে হবে। মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ফল্টের কারণে যেকোনো সময় আগুন ধরে যেতে পারে।

নিয়মিত ফিল্টার পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের বার্তায় বলা হয়েছে, খেয়াল রাখতে হবে এসির ভেতর কিছু জমাট বেঁধে যেন না যায়। এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এই ফিল্টার পরিষ্কার বা পরিবর্তন এসি রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ওয়্যারিং পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।

মেরামত কাজ করার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে। অনেক সময় বজ্রপাতেও এসি বিস্ফোরণ ঘটে। এজন্য হাই ভোল্টেজ এড়াতে ভবনের ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিম্নমানের ও নকল এসি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়া গরমের শুরুতে এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার— এসবের অবস্থা ঠিকমতো পরীক্ষা করতে হবে। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর চালু করতে গেলে এসির সংযোগ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। অনেক দিন বন্ধ থাকায় এসির ভেতরে শব্দ হতে থাকে। পানিও পড়তে পারে।

আপনি আরও পড়তে পারেন