রাজধানীর স্কুল পড়ুয়া ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পরোক্ষ ধূমপায়ী!

রাজধানী ঢাকার স্কুল পড়ুয়া ৯৫ শতাংশ শিশুর দেহে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে। যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান। এ সব শিক্ষার্থীর ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত অসুস্থতায় অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ বলা হচ্ছে তামাক ব্যবহার ও এ জাতীয় পণ্যের পরোক্ষ ধূমপানের শিকারে।

এর ফলে জনস্বাস্থ্যবিদরা বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০১৯। আর জনসাধারণকে তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘টোবাকো অ্যান্ড লাং হেলথ অর্থাৎ তামাক এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্য।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, ক্রনিক অবট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), যক্ষ্ণা এবং অ্যাজমা বা হাঁপানি বেশি হচ্ছে।

প্রতিবছর তামাক ব্যবহারের ফলে বিশ্বে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এ ছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আরও প্রায় ১০ লাখ মানুষ। যার বড় একটি অংশ শিশু।

বাংলাদেশে অকালমৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে তামাকের অবস্থান পঞ্চম। প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায় এই তামাকের কারণে। বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবী যখন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে। তখন রোগ, মৃত্যু আর পঙ্গুত্বের বোঝা বাড়িয়ে সেই অগ্রযাত্রাকে স্তিমিত করে দিচ্ছে তামাক।

এ জন্য ফুসফুসের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তামাক সেবনের সম্পর্ক বিষয়ে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যাপক পরিসরে সচেতনতা তৈরির কথা বলছেন চিকিৎসকরা।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের ১০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ। যা একই সঙ্গে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যুর ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী। আবার সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন ২০১৮-এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিশু যক্ষ্ণারোগী শনাক্তের হার দ্রম্নত বাড়ছে। এমনকি ২০১৭ সালে এই হার বেড়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনো ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৮১ লাখ মানুষ। এমনকি বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ। এ ক্ষেত্রে শিশু ও নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

এমতাবস্থায়, এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ফুসফুসের সুস্থতা এবং সব ধরনের তামাকপণ্য থেকে মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ। এ জন্য জনগণ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রণের সুযোগ তৈরির কথা বলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, কার্যকর কর ও মূল্য পদক্ষেপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত কম। ফলে দেশের তরুণ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী খুব সহজেই তামাক ব্যবহার শুরু করতে পারে। আসন্ন বাজেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম জনগণ, বিশেষ করে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় বক্ষব্যাধি গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসকরা বলেন, গৃহস্থালি, কর্মস্থল, গণপরিবহনসহ সব ধরনের পাবলিক পেস্নসে ধূমপানের প্রকোপ কমানো না গেলে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা এবং মৃত্যু হ্রাস করা সম্ভব হবে না।

এ ক্ষেত্রে সব পাবলিক পেস্নস থেকে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তকরণসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫. দশমিক ৩ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ধারাবাহিকতায় তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নিয়ে একটি তথ্যচিত্র (বাংলা ও ইংরেজি সংযুক্ত) প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সরকারি বেসরকারিভাবে জেলা শহরগুলোতে সচেতনতামুলকর্ যালি, আলোচনা সভা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন