রূপগঞ্জে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই পিয়ন দিয়েই চলে সব

রূপগঞ্জে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার নেই পিয়ন দিয়েই চলে সব

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা। সেখানে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া থাকলেও স্বাস্থ্যসেবা চলে পিয়ন দিয়ে।
তবে সবাই হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলার কথা থাকলেও খোলা হয় সময়ের অনেক পরে। এখানে স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে অনেক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৯টা। ভুলতা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে তালা ঝুলানো। সাড়ে ৯টার দিকে এক শিশু তালাটি খোলে।
পরে জানা যায়, শিশুটি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আয়েশা সিদ্দিকার ছেলে। ভেতরে প্রবেশ করেই দেখা গেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সবগুলো কক্ষ তালা দেওয়া। ১০টার দিকে সাংবাদিক দেখে অপ্রস্তুতভাবেই আয়েশা সিদ্দিকা তার কক্ষটি খুলে বসেন। তার সঙ্গে আলাপ করতে করতে ঘণ্টাখানেক হয়ে যায় কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কারও উপস্থিতি নেই। ততক্ষণে কয়েকজন রোগী ফেরতও যান। সোয়া ১১টার দিকে আসেন পিয়ন ছলিম উদ্দিন। তাকে জিজ্ঞেস করতে তিনিও কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তখনও মেডিকেল কর্মকর্তা, উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্টসহ অন্য কক্ষ তালা লাগানো দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, ভুলতা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিদিন বন্ধের মতোই থাকে। চিকিৎসক বসেন না। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা আয়েশা সিদ্দিকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকার কারণে মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। যদিও তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্যসেবা দিতে অনেক সময় মাঠে থাকতে হয়।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আকলিমা বেগমের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অসুখ হলে এখানেই আসি চিকিৎসা নিতে। ডাক্তার না পেয়ে ছলিম চাচার কাছ থেকে ওষুধ নেই। কোনো কোনো সময় ওষুধ থাকে আবার অনেক সময় ওষুধ থাকে না।
স্থানীয় হাবিবুর রহমান নামে এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ডাক্তার তো পাওয়াই যায় না। ওষুধের জন্য ছলিম মিয়ার কাছে গেলে তিনি বলেন, কিছু ওষুধ আছে আবার কিছু ওষুধ নেই। এ ধরনের অভিযোগ আরও রয়েছে।
জানা গেছে, ভুলতা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত রয়েছেন মেডিকেল কর্মকর্তা হেলেনা বেগম, উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা সজীব, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে আয়েশা সিদ্দিকা, ফার্মাসিস্ট বাদল মিয়া, পরিবারকল্যাণ সহকারী হিসেবে শারমিন আক্তার, হাসনা হেনা, ফরজুতুন নেছা, মাসুদা বেগম, স্বাস্থ্য সহকারী আতিকুর রহমান, নাদিম মিয়া, রফেজা আক্তার, তাহমিনা আক্তার। আর সরকারি নিয়োগ ছাড়া পিয়ন হিসেবে কাজ করেন ছলিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি।
এখানে আসা রোগীদের অভিযোগ, শুধু আয়েশা সিদ্দিকা সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন অফিস করেন। আর বাকিরা মাঝে মাঝে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। মাঝে মাঝে তাদের চেহারা দেখা যায়। যদিও আয়েশা সিদ্দিকা দাবি করেন, তিনি সপ্তাহে শনি, রবি ও বুধবার স্বাস্থ্যসেবা দিতে মাঠে থাকেন।
আর স্বাস্থ্য সহকারীদের তেমন দেখা পাওয়া যায় না। তারা স্থানীয় হওয়ায় কেউ এসবের প্রতিবাদ করারও সাহস পায় না বলে দাবি স্থানীয়দের।
তবে, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার সজীবের দাবি, তিনি এ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত থাকলেও তাকে বসানো হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর মেডিকেল অফিসার হেলেনা বেগমও সেখানেই বসেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফার্মাসিস্ট বাদল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভি ফেরদৌস বলেন, ওষুধ পর্যাপ্ত রয়েছে। এ ছাড়া আমার এখানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। চিকিৎসক আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। অন্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে।###

 

আপনি আরও পড়তে পারেন