লকডাউনের সময় যেসব ইবাদত করবেন

লকডাউনের সময় যেসব ইবাদত করবেন

করোনা ভাইরাসের কারণে বছর খানেক ধরেই স্তব্ধ গোটা বিশ্ব। বন্ধ হয়ে আছে স্কুল-কলেজ ও মাদারাসাসহ যাবতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে ‘শাটডাউন-লকডাউন’ ও ‘কঠোর বিধি-বিধান’ নামে চলাফেরায় নতুন নিয়ম জারি হচ্ছে। ঘরবন্দি ও কর্মবিমুখ জীবনের ব্যাপ্তি আরও প্রসারিত হতে চলেছে।

তাই লকডাউনের অলস সময়টাকে ইতিবাচক কাজে ব্যয় করা জরুরি।  না হয় জীবন হয়ে পড়তে পারে নিয়ন্ত্রণহীন, বিরক্তিময় ও দুর্বিষহ। তাই হেলা না করে সময়টার যথাযথ মূল্যায়নের বিকল্প নেই। এতে নিজের মানসিক প্রশান্তি লাভের পাশাপাশি পরকালের জন্য আমলের পাল্লাও ভারী হবে।

 

সুস্থতা ও অবসরের সময়টা কাজে লাগাতে আদেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি হাদিসে বলেন, ‘সুস্থতা ও অবসর দুটি উল্লেখযোগ্য নেয়ামত। অসংখ্য মানুষ এ নিয়ে ধোঁকায় আছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)

অতএব, সতত কামনা— করোনার এই অবসরে  ইবাদাত, গঠনমূলক ও ইতিবাচক কাজে নির্মিত হোক— আপনার জীবনের নতুন অধ্যায়।

 

একটু খানি আধ্যাত্মিকতা

ভোগবাদ আর বস্তুবাদঘনিষ্ঠ জীবন আমাদের মাঝে জন্ম দিয়েছে অন্তহীন আকাঙ্ক্ষা ও সম্পদলিপ্সা । যার পরিণতিতে আমরা প্রতিনিয়ত মানবিকতা থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের জীবন থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রশান্তি। তাই করোনায় লকডাউনের এই অবসরে আধ্যাত্মিকতার দিগন্তে ফিরে আসুন। জীবনকে আবার রাঙিয়ে তুলুন প্রশান্তি ও প্রানবন্ততায়। সময়মত নামাজ পড়ুন । ঘরে আনুন ইবাদতের পরিবেশ।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য বাড়িতে নামাজ আদায় করা জরুরি। কেননা ফরজ নামাজ ছাড়া লোকেরা ঘরে যে নামাজ আদায় করে, তা-ই উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩১; মুসলিম, হাদিস : ৭৮০)

মহাগ্রন্থের সান্নিধ্য কাটুক সময়

মহাব্যস্ত জীবনে পবিত্র গ্রন্থ কোরআনুল কারিম পড়ার সুযোগ— অনেকের খুব একটা হয়ে ওঠে না । অথচ জীবনের যত সংকট-সমস্যা, দুঃখ-যাতনা সবকিছুরই সমাধান আছে কোরআনে। কোরআনের গভীর অধ্যয়ন আপনাকে প্রতিনিয়ত নতুন কিছুর সন্ধান দিবে। নিজে কোরআন পড়ুন; সন্তানদের কোরআন পড়াবার ব্যবস্থা করুন।

বাড়ি-ঘরে কোরআন তিলাওয়াত— বরকত লাভ এবং শয়তান দূর হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিও না। অবশ্যই শয়তান সেই ঘর থেকে পলায়ন করে, যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৮০)

আবু উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন— আমি রাসুল (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘তোমরা কোরআন পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কোরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯১০)

কিছু পড়াশোনা করুন

দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে বিশুদ্ধ চিন্তার ইসলামি লেখকদের বই পড়ার বিকল্প নেই। বই আপনার জ্ঞানজগতকে বিস্তৃত ও ঋদ্ধ করবে। একঘেয়ে জীবনকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। অশ্লীলতা ও ভ্রষ্টাচার মুক্ত গল্প-উপন্যাসের বইও পড়তে পারেন নির্দ্বিধায়। ইসলামি লেকচার ও শিক্ষণীয় ভিডিওও দেখতে পারেন।

হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)

সুস্থ বিনোদনে অংশ নিন

দেহমনকে সজীব রাখতে বিনোদনের বিকল্প নেই। এজন্যে ইসলাম সুস্থ ও হালাল বিনোদনকে উৎসাহিত করেছে। সন্তানদের জন্য সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন। লক্ষ্য রাখুন ওরা যেন মাদক বা অনলাইন গেইমিং এর মতো সর্বনাশা ব্যাধিতে আসক্ত না হয়ে পড়ে।

আনাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) আমাদের সঙ্গে উৎফুল্ল মেজাজ ও সম্প্রীতি প্রদর্শন করতেন। এমনকি আমার ছোট ভাইকেও জিজ্ঞেস করতেন, ‘হে আবু উমাইর! করেছে তোমার নুগাইর? ‘উমায়র-এর একটি ছোট্ট বুলবুল পাখি ছিল। সে সেটা নিয়ে খেলা করত। পাখিটি মরে গিয়েছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১২৯; মুসলিম, হাদিস : ২১৫০; আবু দাউদ, ৪৯৬৯; তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭২০)

তবে বিনোদনে যেন মিথ্যা ও অনৈসলামিক কিছু স্থান না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সর্বাত্মক। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘হে আল্লাহ রাসুল, আপনি তো আমাদের সঙ্গে রসিকতা করেন। তিনি বললেন, ‘আমি সত্য ছাড়া ভিন্ন কিছু বলি না।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯৯০)

সম্পর্ক আরও নিবিড় করুন

কর্মব্যস্ত জীবনে সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। করোনার এই অবসরে পরিবার, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও ভালো বন্ধু বান্ধবদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করুন। রাসুলুল্লাহ ( সা. ) বলেছেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে থেকো। মুসলমান মুসলমানের ভাই। (বুখারি, হাদিস : ৫১৪৪)

বাগান করুন, গাছ লাগান

প্রশান্তিময় জীবনের জন্য চাই প্রকৃতির অকৃত্রিম ছোঁয়া । অবসরটা অলসভাবে না কাটিয়ে গাছ লাগান, গাছের পরিচর্যা করুন। মনটা ফুরফুরে থাকবে। রাসুলুল্লাহ ( সা. ) বলেছেন, কোন মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ করে আর তা থেকে পাখী কিংবা মানুষ অথবা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সাদাকাহ স্বরূপ হবে। (বুখারি, হাদিস : ২৩২০)

অন্যত্র রাসুলুল্লাহ ( সা. ) বলেছেন, ‘কেয়ামতের পরিস্থিতিতেও যদি তোমাদের কারো হাতে একটি গাছের চারা থাকে, কেয়ামত কায়েম হওয়ার আগেই পারলে সেই চারাটি রোপণ করে দাও।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১২৯৮১)

স্বেচ্ছাসেবায় যুক্ত হোন

করোনার কড়াকড়িতে কাজ হারিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ছেন— নিম্ন আয়ের মানুষ। অবস্থাসম্পন্ন মানুষদের উচিৎ ওদের পাশে দাঁড়ানো। রাসুলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন, আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যে নিরত থাকে। (বুখারি, হাদিস : ২৬৯৯)

করোনা আক্রান্ত মানুষদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে নিশ্চয়ই থাকবেন। কিন্তু কিছুতেই অমানবিক হবেন না। তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করুন। আপনিও তো একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন।

হাবিবুল্লাহ বাহার।তরুণ আলেম, লেখক ও অনুবাদক।

আপনি আরও পড়তে পারেন