শনির আখড়ায় ট্রাকচাপায় আহত শিক্ষার্থী শঙ্কামুক্ত

বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় সড়কে আন্দোলনে নেমেছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। এ সময় চালকের লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য একটি ট্রাককে থামতে বলেন তারা। কিন্তু ট্রাকটি না থেমে দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে। তখন এক শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে যান। তার ওপর দিয়েই চলে যায় ট্রাকটি।

বুধবার সকালের এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরে জানা যায়, আহত হয়ে ওই শিক্ষার্থী প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত।

আহত এই শিক্ষার্থীর নাম ফয়সাল মাহমুদ। তিনি নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। আহত হওয়ার পর তাকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত থাকলেও তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেমরা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীর অবস্থানও জানা গেছে। তার চিকিৎসার তদারকি করা হচ্ছে। পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া ট্রাকটি শনাক্ত করে এর চালক-হেলপারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ঘটনার সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, একটি নীল-সাদা রঙের ট্রাক ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ট্রাকের মালপত্র রাখার অংশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ আবার ওঠার চেষ্টা করছেন। ট্রাকের চারপাশে ভিড় করে আছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা চালকের উদ্দেশে কিছু বলছেন। সাদা শার্ট পরা ও পিঠে কালো ব্যাগ ঝোলানো শিক্ষার্থী ফয়সাল লাঠি হাতে ট্রাকটির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ ট্রাকটি গতি বাড়িয়ে সামনের দিকে গেলে তিনি পেছানোর চেষ্টা করেন এবং একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান। তখন তার ওপর দিয়ে চলে যায় ট্রাকটি। শিক্ষার্থীরা ট্রাকটির পিছু ধাওয়া করলেও আটকাতে পারেননি।

ভিডিওটি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয়, ফয়সাল ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন। এ কারণে ভিডিওচিত্রের পাশাপাশি তার মৃত্যুর গুজবও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দোষী চালকের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন তারা। পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই জানাতে পারেননি ফয়সালকে কোথায় নেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রথমে তার নাম-ঠিকানাও জানা যায়নি।

সাইনবোর্ডের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ডা. সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া সমকালকে জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফয়সাল মাহমুদকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বাম কোমরের হিপ জয়েন্টে ফ্র্যাকচার (হাড়ে চিড়) হয়েছে। এ ছাড়া পেট ও ঠোঁটে আঘাত রয়েছে। শরীরের ভেতর কোথাও রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি-না জানার জন্য সিটি স্ক্যান করাতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে পুরুষ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তার মুখ দিয়ে খাওয়া আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সে আশঙ্কামুক্ত হলেও অন্তত চার থেকে ছয় সপ্তাহ তাকে বিছানায় বিশ্রামে থাকতে হবে।

আহত ছাত্রের মা কাকলী আক্তার সমকালকে জানান, ফয়সাল পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর কদমতলীর মোহাম্মদবাগ এলাকার বাসায় থাকেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। তাদের বাবা শামসুল হক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বুধবার সকালে ফয়সাল কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শনির আখড়ায় তাকে ট্রাক চাপা দেয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন। পরে লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ফয়সালের বাবা শামসুল হক জানান, মতিঝিলে থাকার সময় তিনি ছেলের দুর্ঘটনার খবর পান। এরপর ছুটে যান হাসপাতালে। ছেলের সুস্থতার জন্য সবার দোয়া চান তিনি।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ট্রাকটির নম্বর জানারও চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে দোষী চালককে শনাক্ত করা যাবে। পুলিশ এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দোষীরা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment