শবে কদর কি ২৭ রমজানেই?

শবে কদর কি ২৭ রমজানেই?

লাইলাতুল কদর কি ২৭ রমজান? আমাদের দেশে ২৭ রমজানকে শবে কদর বলে আখ্যা দেওয়া হয়। মূলত এ কথাটি একদম উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। তবে এরপরও শুধু এই রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসাব করে অন্য রাতগুলো অবহেলায় কাটানো উচিত নয়।

বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যে যেহেতু এই রাতের কথাও উল্লেখ আছে, তাই এই রাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি শেষ দশকের অন্য রাতগুলোকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। যির ইবনে হুবাইশ (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে বললাম, আপনার ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, সারা বছর যে লোক রাত জেগে ইবাদত করবে সে কদরের রাত লাভ করবে।

উবাই (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা আবু আবদুর রহমানকে মাফ করুন! নিশ্চয়ই তিনি জানেন যে কদরের রাত রমজানের শেষ দশ দিনে এবং তা সাতাশে রমজানের রাতেই, তবু তার এ কথা বলার কারণ হলো লোকেরা যেন (সাতাশ তারিখের) নির্ভর করে বসে না থাকে। তারপর কোনো প্রকার ব্যতিক্রম না করেই উবাই (রা.) কসম করে বলেন, সাতাশের রাত কদরের রাত।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আবুল মুনযির, এ কথা আপনি কিসের পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন? তিনি বলেন, সেই আলামত বা নিদর্শনের প্রেক্ষিতে, যা রাসুল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন। তা হলো, ওই দিন সকালে সূর্য এরূপভাবে উদিত হয় যে তার মাঝে প্রখর রশ্মি থাকে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৫১)

তাই সাতাশে রমজানের পাশাপাশি শেষ দশকের অন্য রাতগুলোকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেহেতু মহানবী (সা.) এ রাতগুলোতে বেশি আমল করেছেন এবং অন্যদের এই রাতগুলোর ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করো। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক হতে গণনায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২১)

কিছু কিছু বর্ণনায় আবার রমজানের শেষ সাত রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.)-এর কতিপয় সাহাবিকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমজানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৫)

ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে একদল লোককে শবে কদর (রমজানের) শেষ সাত রাতের মধ্যে রয়েছে বলে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আর কিছুসংখ্যক লোককে তা শেষ দশ রাতের মাঝে আছে দেখানো হয়েছে। তখন মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা শবেকদর শেষ সাত রাতের মধ্যেই খোঁজ করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৯১)

আবার কোনো কোনো বর্ণনামতে ২৩ রমজানের রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আবদুল্লাহ ইবনে উনায়স (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকে কদরের রাত দেখানো হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ওই রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্ন আরো দেখানো হয়েছে যে আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব ২৩তম রাতে বৃষ্টি হলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সঙ্গে (ফজরের) নামাজ আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তার কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনে উনায়স (রা.) বলতেন, তা ছিল ২৩তম। ’  (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৫)

ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে লাইলাতুল কদরের তারিখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। প্রতিটি মতই নির্ভরযোগ্য এবং সব তারিখই শেষ দশকের মধ্যেই। তাই আমরা যদি লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জন করতে চাই, তবে শেষ দশকের প্রতিটি রাতকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন