শীতকালে ওজন বেড়ে যাওয়ার ৫ কারণ

শীতকালে হয়তো আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন যে আপনার প্যান্টের বাটন লাগাতে পারছেন না, কিংবা হয়তো দেখবেন যে প্রিয় সোয়েটারটি টাইট হয়ে গেছে!
এ প্রতিবেদনে শীতকালে ওজন বাড়ার ৫টি কারণ উল্লেখ করা হল, যা থেকে আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণের ধারণা পেতে পারেন।


১. আপনি আউটডোর এড়িয়ে চলেন

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটন’স স্কুল অব পাবলিক হেলথের ব্যায়াম গবেষক জন র‍্যাগলিন বলেন, ‘তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আপনার চলাফেরার উদ্দীপনাও কমে যায়।’ আপনি একবার রাতের জন্য ঘরে ফিরলে আপনি কি আসলেই জিমে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হতে চান?

শীতের আগে আপনি যেভাবে সাপ্তাহিক ওয়ার্ক আউট করতেন, শীতের সময় সেভাবে ওয়ার্ক আউট করেন না অথবা কম করেন। এমনকি আপনি জিমে গেলেও সম্ভবত অধিক সময় ভেতরে কাটান যখন আপনি ওয়ার্ক আউট করেন না। ডা. র‍্যাগলিন বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে আপনার স্ট্রোলিং বা হাঁটার পেছনে সময় ব্যয়ের কথা স্মরণ করুন, যা দৈনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করত, যার ফলে আপনি তখন শীতের চেয়ে বেশি ক্যালরি পোড়াতেন।’

মেন’স হেলথের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অ্যালান আরাগন বলেন, ‘যখন আপনি ইনডোরে টিভির সামনে নিজেকে আবদ্ধ রাখেন, তখন আপনি অমনোযোগী হয়ে স্ন্যাক খাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘এবং আপনি সম্ভবত জাঙ্ক ফুড নির্বাচন করেন।’ প্রকৃতপক্ষে, একটি পর্তুগীজ গবেষণায় পাওয়া যায় যে, যেসব লোকেরা প্রতিদিন ১২০ মিনিটেরও বেশি সময় টিভি দেখেন তারা অত্যধিক ফ্যাট জাতীয় খাবার খান এবং ফল ও শাকসবজি কম খান।

ডা. র‍্যাগলিন বলেন, ‘তাই বাইরে যান, এমনকি অল্প সময়ের জন্য হলেও।’ একে অপরকে বাইরে ডেকে নেওয়ার জন্য কোনো বন্ধুর সঙ্গে চুক্তি করুন। লাঞ্চের সময় কিছুক্ষণের জন্য দ্রুত হাঁটুন অথবা বন্ধুর সঙ্গে কোনো শীতকালীন খেলা খেলুন। বেশি করে দৈনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ও শক্তির মাত্রা বুস্ট করার জন্য এটি একটি সাধারণ উপায়।

২. আপনি পার্টি ফুড না খেয়ে থাকতে পারেন না

বিভিন্ন পার্টি, বিশেষ দিন, খাদ্যভিত্তিক হলিডে কিংবা স্পেশাল উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানে আপনি সুস্বাদু স্ন্যাক খেয়ে থাকেন। এটি একটি সমস্যা। বোর্ড-সনদপ্রাপ্ত স্পোর্ট ডায়েটিশিয়ান ম্যারি স্প্যানো বলেন, ‘যদি আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান বা কমাতে চান, তাহলে পুরো সপ্তাহে আপনার ক্যালরি ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন।’ তাই এসব বিশেষ উপলক্ষ বা অনুষ্ঠানে প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণে আপনার ক্ষতি হয় কল্পনাতীত।

কিন্তু আমরা আপনাকে এসব আনন্দঘন মুহূর্তে অংশগ্রহণ করতে অনুৎসাহিত করছি না অথবা ঘরে অবস্থান করতে বলছি না। এসব বিশেষ দিন বা পার্টিতে আপনি টেবিলে অনেক রকম সুস্বাদু খাবার দেখবেন। ডায়েটিশিয়ান স্প্যানোর মতে, ‘খারাপ খবর হচ্ছে, এসব স্ন্যাকের বেশিরভাগের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি থাকে।’

ডা. আরাগন বলেন, ‘গবেষণা সাজেস্ট করছে যে, যখন আপনি অনেক লোকের সঙ্গে থাকবেন, আপনি বারবার খেতে বসবেন যা আপনাকে অধিক ভোজনের দিকে পরিচালিত করবে।’ বিশেষ দিনের সমাবেশের জন্য সর্বোত্তম পরিকল্পনা করুন- দুশ্চিন্তা করবেন না, আমরা আপনাকে প্রথমেই ঘর থেকে খেয়ে যেতে বলছি না। আপনি যা করবেন তা হচ্ছে, উপযুক্ত খাবার দিয়ে প্লেট পূর্ণ করা। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ফল ও শাকসবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিম, অথবা কোল্ড কাট যেমন- মুরগি প্লেটে ওঠান। এই কৌশল আপনার পেট ভরা রাখবে, তাই আপনি দ্বিতীয়বার ডেজার্ট টেবিলে বসতে প্রলুব্ধ হবেন না।

৩. আপনি কমফোর্ট ফুড খেতে চান

নিউ ইয়র্ক ওবেসিটি নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের ওজন হ্রাস কর্মসূচির পরিচালক রিচার্ড ওয়েইল বলেন, ‘শীতকাল শুধু বিষণ্ন করে না, মানসিক চাপও বৃদ্ধি করে।’ শীতের কারণে আপনার কোনো কাজে দেরি হতে পারে, অথবা কাজ জমে যেতে পারে। তাই আপনি সান্ত্বনার জন্য খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার গবেষণা থেকে জানা যায়, লবণ ভোজন প্রকৃতপক্ষে স্ট্রেস হরমোন যেমন- করটিসল হ্রাস করতে পারে। এছাড়া খুশি ও সান্ত্বনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ভালো-অনুভব হরমোন অক্সিটোসিনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। শর্করারও একই রকম ফলাফল রয়েছে। তাই এটি কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, আমরা যখন স্ট্রেস বা মানসিক চাপে থাকি তখন যেসব খাবার খেতে চাই সেসবের অনেকগুলোই ক্যালরি বম্ব।

সঙ্গত কারণ ছাড়া কমফোর্ট ফুড খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দমন করতে পারেন। এরকম অভ্যাস আপনাকে পরবর্তীতে এসব খাবার অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে। আপনার প্লেটে যেন কমফোর্ট ফুডের স্তুপ না হয় তা নিশ্চিত করুন। ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখুন, একপাশে শাকসবজি ও অন্যপাশে আপনার প্রিয় কমফোর্ট ফুড রাখুন।

৪. আপনার মেজাজ খারাপ হয়

ডা. ওয়েইল বলেন, ‘দিন ছোট ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে আপনি অধিক বিষণ্ন অনুভব করতে পারেন।’ এটিকে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার বা স্যাড (এসএডি) বলে এবং এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অবসাদ, বিরক্তি ও বিষণ্নতা, যা আপনি শীতের মাসগুলোতে অনুভব করতে পারেন।

ডা. ওয়েইল বলেন, ‘আপনার অন্ত্রের জন্য খারাপ খবর হচ্ছে- যখন আপনি বিষণ্ন, উদ্বিগ্ন ও বিরক্তি অনুভব করবেন তখন আপনার ভোজন প্রবণতা বেড়ে যাবে।’ গবেষণা বলছে যে, এ অবস্থায় আপনি অধিক পরিমাণে শর্করা বা শ্বেতসার জাতীয় খাবারের দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা প্রায়ক্ষেত্রে উচ্চ ক্যালরিতে ভরপুর।

যদি খাবার আপনাকে ভালো অনুভূতি এনে দিতে না পারে, মনকে চাঙা করার জন্য আপনার মদ্যপানের দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাতে রয়েছে অতিরিক্ত ক্যালরি, উদাহরণস্বরূপ- দুই ক্যান বিয়ার আপনার শরীরে অতিরিক্ত ২২০ ক্যালরি যোগান দেবে। এভাবে প্রতিদিন সেবন করলে প্রতি সপ্তাহে আপনি ১,৫৩০ ক্যালরি গ্রহণ করবেন।

এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় যে, অ্যালকোহল পানে খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা ক্ষুধা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং তা প্রকৃতপক্ষে আপনাকে অধিক পরিমাণে চর্বি ও মসলাদার খাবার খাওয়ার দিকে চালিত করবে।

৫. আপনার ঘুমের শিডিউল বিঘ্নিত হয়

ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের গবেষণা অনুসারে, ‘যখন আপনার মেজাজ খারাপ হয়, আপনার ঘুমেরও সমস্যা হতে পারে।’ এ গবেষণার গবেষকরা বলেন, প্রকৃতপক্ষে যদি আপনি সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারে ভুগেন আপনি বিছানায় ঘুমবিহীন রেস্ট বা রিলাক্সের পেছনে অধিক সময় ব্যয় করবেন, যা ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগের অনুরূপ।

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের মতে, ‘যদি আপনি এসব ডিসঅর্ডারে না ভুগেন, তাহলেও শীতে আপনার বেশি ঘুমের প্রয়োজন অনুভব হতে পারে, যদিও আপনার প্রকৃত ঘুমের প্রয়োজন বৃদ্ধি পায় না।’

পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার ফলে অথবা অত্যধিক ঘুমে বিছানায় সারা সকাল কাটানোর কারণে আপনার শরীরের ঘুমচক্র নিয়ন্ত্রণকারী অভ্যন্তরীণ ঘড়ি সার্কাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হতে পারে। গবেষণা বলছে যে, ঘুমের শিডিউলে বিশৃঙ্খলা পরিতৃপ্তির হরমোন লেপটিনের মাত্রা হ্রাস করতে পারে, যা ক্ষুধা বাড়াতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধির দিকে চালিত করে।

যদি আপনি ঘুমহীন চোখে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন, তাহলে ভালো ঘুমের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment