শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ঢাকাকে ১ রানে হারাল কুমিল্লা

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ঢাকাকে ১ রানে হারাল কুমিল্লা

বিপিএলের ঢাকা পর্বকে নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায় যে ম্যাড়ম্যাড়ে ও উত্তেজনাহীন খেলার কারণে আকর্ষণ হারায় টুর্নামেন্ট। কিন্তু টুর্নামেন্টের সমাপ্তি ঘটাতে ঢাকায় বিপিএলের শেষ পর্বের প্রথম ম্যাচটিই হলো উত্তেজনায় ঠাসা। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ম্যাচের একদম শেষ বলে গিয়ে ১ রানের জয় পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।


রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় ঢাকা। জরুরী ভিত্তিতে উড়িয়ে আনা লঙ্কান ওপেনার উপুল থারাঙ্গা সাজঘরে ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। মাত্র ১ রান করে আউট হন টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকা রনি তালুকদার।
সুনিল নারিনকে নিচে রেখে ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ দেয়া হয় মিজানুর রহমানকে। ২টি চারের মারে শুরুটা ভালো করেছিলেন তিনি। কিন্তু ছন্দ ধরে রেখে নিজের ইনিংস বড় করা হয়নি তার। ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হন মিজানুর।
মাত্র ১৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে তখন চাপ আরো বাড়ান অধিনায়ক সাকিব। অফস্পিনার মেহেদি হাসানকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আবারো বড় শটের খোঁজে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ২৯ রানে ৪ উইকেট চারিয়ে অকূল পাথারে তখন ঢাকা।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন ওপেনিং থেকে পাঁচ নম্বরে নামা সুনিল নারিন এবং কাইরন পোলার্ড। দুজন মিলে ৩৪ বলে গড়েন ৪২ রানের জুটি। দ্বাদশ ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন নারিন (২৪ বলে ২২)। তবে সে ডেলিভারি করার সময় শহিদ আফ্রিদির পেছনের পা বক্সের দাগ ছুঁয়ে যাওয়ার কারণে ঢাকার ডাগআউট থেকে নো বলের জন্য বেশ তোড়জোড় দেখা যায়।
নারিনের বিদায়ের পর ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বাঁধেন কাইরন পোলার্ড এবং আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু কুমিল্লার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে হাত খুলে মারার কাজটা করতে পারছিলেন এ দুই মারকুটে অলরাউন্ডার। এর মধ্যে আবার শহিদ আফ্রিদির করা ১৬তম ওভারটি পুরোটাই মেইডেন খেলে বসেন রাসেল।
১৭তম ওভার করতে এসে আফ্রিদির দেখানো পথটাই অনুসরণ করেন মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীন। স্ট্রাইকে থাকা পোলার্ডকে মারার কোনো সুযোগই দেননি তিনি। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা পোলার্ড ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন তামিম ইকবালের হাতে। আউট হওয়ার আগে ২টি করে চার-ছক্কার মারে ৩৩ বলে ৩৪ রান করেন পোলার্ড।
ঢাকার জয়ের সমীকরণ তখন ২২ বলে ৩৮, হাতে ৬ উইকেট। এমতাবস্থায় উইকেটে এসে প্রথম বলেই ব্যাট চালান নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় পয়েন্ট অঞ্চল থেকে ক্যাচ নিয়ে তাকে সাজঘরে ফেরান এভিন লুইস। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগে সাঈফউদ্দীনের। শেষ বলে লেগবাই থেকে এক রান নিয়ে হ্যাটট্রিক ঠেকান নতুন ব্যাটসম্যান শুভাগত হোম। কিন্তু ডাবল উইকেট মেইডেন নিয়ে কুমিল্লার দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন সাঈফউদ্দীন।
শেষ ৩ ওভার থেকে ৩৭ রানের প্রয়োজন থাকে ঢাকার। তাদের আশার প্রদীপ হয়ে তখনো উইকেটে ছিলেন রাসেল। যিনি ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই স্ট্রাইক পেয়ে হাঁকান ১০৯ মিটারের বিশাল ছক্কা, পরের বলেই মারে ৮২ মিটারের আরেকটি ছক্কা। সে ওভার থেকে সবমিলিয়ে ১৭ রান নিয়ে সমীকরণটা ১২ বলে ২০ রানে নামিয়ে নেয় ঢাকা।
তবে এর চেয়েও বড় ক্ষতিটা হয় ওভারের পঞ্চম বলে। শুভাগত হোমের জোরালো শটের বিপক্ষে কভারে দাঁড়িয়ে সাঈফউদ্দীন ডাইভ দিলে ব্যথা পান আঙুলে, মাঠ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। তখনো তার স্পেলের ১ ওভার বাকি থাকায় ডেথ ওভারের বিষয়ে চিন্তার ভাজ দেখা দেয় কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুলের কপালে।
সাঈফউদ্দীন মাঠ ছেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ১৯তম ওভারে ডাকা হয় ওয়াহাব রিয়াজকে। প্রথম বল ডট দিয়ে দ্বিতীয় বলেই রাসেলকে থার্ডম্যানে ক্যাচে পরিণত করেন ওয়াহাব। কিন্তু বল ছাড়ার সময় তার সামনের পা পপিং ক্রিজ অতিক্রম করায় নো বলের কল্যাণে বেঁচে যান রাসেল। ফ্রি হিট পায় ঢাকা।
তবে উইকেট ক্রসওভার করায় ফ্রি হিটের বল স্ট্রাইকে যান শুভাগত। ফ্রি হিটের বলে দুই রান নিলেও ওভারে তৃতীয় এবং চতুর্থ বল ডট দিয়ে বসেন শুভাগত। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে থার্ডম্যান ফিল্ডারের ধরা পড়েন তিনি। শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে শেষ ওভারের সমীকরণটা ৬ বলে ১৩ রানে নামান রাসেল।
কিন্তু শেষ ওভারের প্রথম বলে স্ট্রাইকে থাকেন রুবেল হোসেন। এদিকে হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে মাঠে ফিরে আসেন সাঈফউদ্দীন। আগের তিন ওভারে ১ মেইডেনসহ মাত্র ১১ রান খরচায় ৩ উইকেট নেয়ায় তার হাতে বল তুলে দেয়ার আগে ভাবতে হয়নি কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল।


ওভারের প্রথম বলেই রুবেল হোসেনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন সাঈফউদ্দীন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে আসেন শাহাদাত হোসেন রাজীব। মুখোমুখি প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিয়ে রাসেলকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন রাজীব। শেষ ৪ বল থেকে বাকি থাকে ১২ রান।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মারকুটে অলরাউন্ডার রাসেলের জন্য তখন ২টি ছক্কার খেল। ওদিকে বল হাতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছেন সাঈফউদ্দীন। প্রাথমিক জয়টা হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment