সতী নদীর কি হবে বলবেন কি প্রশ্ন আশরাফুল ও ময়নার

সতী নদীর কি হবে বলবেন কি প্রশ্ন আশরাফুল ও ময়নার
সাধন রায়, লালমনিরহাট প্রতিনিধিরঃ
লালমনিরহাট জেলা ৫ টি উপজেলা (লালমনিরহাট সদর,আদিতমারী,হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম) নিয়ে গঠিত। এই জেলার উপর দিয়ে অনেক গুলো নদী প্রবাহিত হয়েছে যা তিস্তা, ধরলা, রত্নাই ও সতী-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী নদী নামে পরিচিত। সতী-স্বর্ণামতি-ভাটেশ্বরী নদীর আয়োতন মাত্র ৩৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার এবং নদীটি সর্পিলাকার।
বর্তমানে নদীটির বেশির ভাগ যায়গা ভরাট হয়ে যাওয়া বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় বন্যা ও সুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় নদী পাড়ের জমি গুলো চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে ওঠে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সতী নদীর ১৭ কিলোমিটার খননের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্টান এসএএসআই গ্রুপ।
একই বছরের ডিসেম্বর মাসে এসএএসআই গ্রুপের এজেন্ট হাতিবান্ধা উপজেলার পারুলিয়া বাজারের রেদয়ান আহমেদ সতী নদী খননে এলাকা ভিত্তিক সাব-ঠিকাদার নিয়োগ করে।
প্রথমে ভেকু (এসকেভেটর) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু করে। শুরুটা ভাল হলেও কাজ চলা কালিন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট রেদয়ান আহমেদ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ম্যানেজ করে কাজ বাবদ কোটি টাকা তুলে নেয়।
এরই মাঝে গত বছরের মার্চ মাসে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে সরকার লকডাউন ঘোষনা করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সতী নদী খনন কাজ হজবরল করে বন্ধ করে দেয়। নদী খননের সাব-ঠিকাদারদের কোন টাকা না দিয়ে তাদের জানায় আগামি অর্থ বছর কাজ করব আপনারা চিন্তা করিয়েন না।
নদী খননের জন্য ভাড়া করে আনা ভেকু(এসকেভেটর), নাইট গার্ড ও লেবারদের পাওনা টাকা না দিতে পারায় এবং টাকা ধার করে নদী খননের কাজ করে ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সাব-ঠিকাদাররা দেউলিয়া হয়ে যায়।
চুক্তি অনুযায়ী এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেোও অদৃশ্য ক্ষমতার জোড়ে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সতী নদীর বারোটা বাজিয়ে কাজ বন্ধ করে মাটি ও বালু বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট রেদোয়ান আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে।
সরেজমিন তদন্তে গিয়ে দেখা যায় আরো ভয়াবহ চিত্র। গত বছর ভেকু দিয়ে নদীর মাটি কেটে উপরে তুলে রাখা হয়। এ বছর বৃষ্টিতে সেই মাটি ধুয়ে আবার নদীতে চলে গেছে। কোথায় কোখায় নদীর পাড় ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। যাহাতে ঔ এলাকায় বসবাসরত জনগন বন্যায় ঘর বাড়ী তলিয়ে যাবার আশংকা করছে।
এসএএসআই গ্রুপের এজেন্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে কাজ না করে মোটা টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাত করারও অভিযোগ করেন অনেকেই।
সতী নদী পাড়ের সারপুকুর এলাকার আশরাফুল বলেন, নদী খননের আগেই নদীটি ভাল ছিল। নদীর আংশিক খনন করে মাটি বিক্রয়ের মহাৎসব চলছে। আর এ সবই হচ্ছে ঠিকাদারের এজেন্ট রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বে। তিনি নদী পাড়ের মাটি লোক দিয়ে বিক্রয় করছেন ফলে নদীর পাড় বাধতে যে মাটির প্রয়োজন হবে তা আর পাবেন না।
তাই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকার মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে অনেক যায়গায় রেদোয়ান আহমেদ লোক দিয়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর ভূগর্ভস্থ মাটি ও বালু তুলে পালা করছেন। কিন্তু কিছু দিন যাবার পড়েই ট্রলি লাগিয়ে আবার বিক্রয় শুরু করেন। ফলে নদী পাড়ের ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কোথায় কোথায় সতী নদীর প্রস্থ বেড়ে যাচ্ছে।
সতী নদী পাড়েন ময়না বেগম বলেন, নদীটি খননের কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দটাই মাটি হবার পথে। রেদোয়ান আহমেদকে ভাল লোক মনে করে ছিলাম। কিন্তু এখন দেখলাম লোকটি আমাদের উপকারের বদলে ক্ষতি চাচ্ছে। আমরা চাইনা আর নদী খনন। আগে নদীটি যেমন ছিল তেমন করে দেন।
এসএএসআই গ্রুপের এজেন্ট রেদয়ান আহমেদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার সেল ফোনে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল কাদের সেল ফোনে বার বার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি।
লালমনিরাট জেলা প্রকাশক আবু জাফর সেল ফোনে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ড্রেজার মেশিন বসাতে নিষেধ করা হয়েছে।তার পরও যদি কেও এমনটি করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন