‘সাংবাদিকদের ফাটিয়ে ফেলবি, পুলিশ তোদের সঙ্গে আছে’

‘সাংবাদিকদের ফাটিয়ে ফেলবি, পুলিশ তোদের সঙ্গে আছে’

‘সাংবাদিকদের ফাটিয়ে ফেলবি, পুলিশ তোদের সঙ্গে আছে’-এমন মন্তব্য করেছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যাওয়া সাংবাদিকদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে সন্ধ্যায় ওই এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ভীতিকর পরিস্থিতি সর্বত্র। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার নেই এলাকায়। বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। ভোটারদের মধ্যেও ভয়ভীতি বিরাজ করছে বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

রোববার (২৮ নভেম্বর) দেশের সহস্রাধিক ইউপির সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ১০টি ইউপিতেও ভোটগ্রহণ চলছে। যদিও ভোটের আগেই ৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হয়ে গেছেন।

৫ নম্বর চরপাতা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলম বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে ইউনিয়নে বহিরাগতরা প্রবেশ করে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনা নিয়ে আমি ৯টি অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভোটের মাঠে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

এ সময় একই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী বিল্লাল হোসেন (আনারস) ও হিজবুল্লাহ গুনু (মোটরসাইকেল) একই ধরনের অভিযোগ করেন।

এরপরই পুলিশ এসে সাংবাদিকদের নানা ধরনের জেরা শুরু করেন। সেখানে এসে হাজির হন রায়পুর উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ।

এ সময় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাকে তিনি বলেন, ‘এরা কারা? সবাইকে থানায় নিয়ে যান। এ সময় সাংবাদিকরা তাদের পরিচয় দিলে তিনি আরো ক্ষেপে যান। বলেন, ‘এখানে আপনাদের কাজ কি? আপনারা কেন এসেছেন?’

তার সঙ্গে থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দেওয়া একজন বলেন, ‘আপনারা তো সাংবাদিক না, আপনারা রিপোর্টার! এলাকা থেকে চলে যান।’

এ সময় নৌকা প্রতীক পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মামুনুর রশিদের মন্তব্য নেওয়ার জন্য দেখা করতে চাইলেও তারা হুমকি-ধামকি দেন। বলেন, ‘আপনাদের মতো সাংবাদিকের কোনো দরকার নেই আমাদের প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করার। আমাদের প্রার্থী এমনিতেই জয়ী হবেন। আপনারা এলাকা ছেড়ে চলে যান।’

এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাংবাদিকদের ফাটিয়ে ফেলবি, পুলিশ তোদের সঙ্গে আছে।’

এ বিষয়ে অভিযোগ করলে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, বিষয়টা আমি দেখছি। নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের বৈধ অনুমতি বা পরিচয়পত্র থাকলে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনাপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটরসাইকেল) সোগার হোসেন বলেন, ইউনিয়নের প্রত্যেকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হলে সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত নির্বাচন হবে বলে আশা করি। এ পর্যন্ত ৫টি অভিযোগ করেও তিনি কোনো প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বলেন, বহিরাগতদের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। বহিরাগতদের ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে। আমরা বিন্দুমাত্র নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যত্যয় ঘটতে দেবো না।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন