সুখী থাকবেন কিভাবে? হাদিসে যা বলা হয়েছে

সুখী থাকবেন কিভাবে? হাদিসে যা বলা হয়েছে

সুখী হতে চান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সুখের খোঁজে, উৎসবের আয়োজন করতে করতেই কেটে যায় জীবনের পুরো সময়কাল। একটু সুখ, ভালো থাকার আশায় দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত কেটে যায় কঠোর পরিশ্রমে। এরপরও মনে হয় কাঙ্খিত সুখ আর একটু প্রশান্তির দেখা মিললো না এখনো।

মানুষের স্বভাবের এই অতৃপ্তির বিষয়টি নিয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি আদম সন্তানের দুই উপত্যকা ভরা সম্পদ থাকে, তবু সে তৃতীয়টার আকাঙ্ক্ষা করবে। আর মাটি ছাড়া আদম সন্তানের পেট কিছুতেই ভরবে না। আর যে তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৬)

প্রতি মুহুর্তে মানুষের চাহিদা ও আকাঙ্খার মাত্রা যে বাড়তে থাকে এই হাদিসে মূলত তাই বলা হয়েছে। মানুষ সুখী থাকতে চায়, সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু এমন অফুরন্ত চাওয়া-পাওয়া আর প্রত্যাশাই তাকে অশান্ত-অসুখী করে তোলে।

মানুষকে এমন অপ্রাপ্তির অশান্তি থেকে মুক্ত করতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। -(ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪১৩৮)

তাই অধিকপ্রাপ্তি ও আকাঙ্খা ছেড়ে অল্পেতুষ্ট হতে চেষ্টা করা উচিত সব মানুষের। কারণ, মানুষের প্রতিটি কাজের প্রতিদান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। মানুষের কোনও কষ্ট-পরিশ্রম কখনো বৃথা যাবে না।

পবিত্র কোরআনেই আল্লাহ তায়ালা এই ব্যাপারে শান্ত্বনা ও নিশ্চয়তা দিয়ে রেখেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমি তাদের তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব। (সুরা : নাহাল, আয়াত : ৯৭

অল্পেতুষ্টি একটি মহৎগুণ। এই গুণ অর্জনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও দোআ করতেন, ‘হে আল্লাহ আমাকে যা রিজিক দিয়েছেন তাতে তুষ্ট করে দিন এবং তাতে আমার জন্য বরকত দিন আর আমার অনুপস্থিতিতে যে কাজ হয় তা ভালভাবে শোধ করুন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, ২/৩৫৬)

আল্লাহ তায়ালা যা দিয়েছেন এতেই তুষ্ট থেকে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কারণ, যার মধ্যে শুকরিয়া নেই এবং যা কিছু পেয়েছে তাতে যে মানসিকভাবে তুষ্ট হতে পারে না, তার চেয়ে দরিদ্র আর কেউ নয়।কারণ, মানুষের আর্থিক দরিদ্রতাই শুধু দরিদ্রতা নয়; বরং সবচেয়ে বড় দরিদ্রতা হলো, মানুষের মনের দরিদ্রতা।

একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বলেন, আবু জর, তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে করো? আবু জর (রা.) বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরপর বলেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে করো? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (ইবনে হিব্বান : ৬৮৫)

আপনি আরও পড়তে পারেন