সেই ১৩ শ্রমিকের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

কুমিল্লায় কয়লার ট্রাকচাপায় নিহত ১৩ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে নীলফামারী জেলা প্রশাসন। শনিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় স্বজনদের কাছে মৃতদেহগুলো হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেন জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন।

এ সময় প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা, ১টি করে কম্বল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়।

এর আগে জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের রাজবাড়ি কর্নময়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মৃতদেহগুলো হস্তান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করে উপজেলা প্রশাসন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজা উদ দৌলা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুভাশিষ চাকমা, জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আরিফা সুলতানা লাভলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তি ভুষন রায়, শিমুবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

চেয়ারম্যান হামিদুল হক জানান, একই স্থান থেকে মীরগঞ্জ ইউনিয়নের মৃতদেহগুলোও হস্তান্তর করা হয়। আজ সকালে শিমুলবাড়ি ও মীরগঞ্জ এলাকায় লাশ নিয়ে আসা হয় কাভার্ডভ্যানে। এখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিহতের পরিবার বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবে বলে জানান চেয়ারম্যান।

পাশাপাশি দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাণ এভাবে শেষ হয়ে যাবে মেনে নিতে পারছেন না কেউ। শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের প্রাক্তন সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, হতদরিদ্র পরিবার এগুলো। কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন তারা।

তিনি বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট আবেদন জানাই, নিহতদের পরিবারের পাশে যেন দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাহলে উপকৃত হবেন তারা।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ইট ভাটায় কয়লা বোঝাই ট্রাকচাপায় নিহত হন ১৩ জন শ্রমিক। তাদের সবার বাড়ি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায়। নিহতদের মধ্যে শিমুলবাড়ি ইউনিয়নে ৪ জন এবং মীরগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ জন।

নিহতরা হলেন, মীরগঞ্জ ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র রায়, মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুণ চন্দ্র রায়, কিশব চন্দ্র রায়ের ছেলে শংকর চন্দ্র রায়, অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপু চন্দ্র রায় ও কামাক্ষা রায়ের ছেলে অমিত চন্দ্র রায়, পাঠানপাড়া গ্রামের নুর আলমের ছেলে মোরসালিন হোসেন, ফজলুল করিমের ছেলে মাসুম হোসেন, জাহাঙ্গির আলমের ছেলে সেলিম হোসেন ও রামপ্রাসাদের ছেলে বিপ্লব রায় এবং শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের আরাজি শিমুলবাড়ি এলাকার অমুল্য চন্দ্র রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায়, মৃত. জগদিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মিনাল চন্দ্র রায়, ধৌলু চন্দ্র রায়ের ছেলে কনক চন্দ্র রায় ও রাজবাড়ি এলাকার মৃত. খোকা রাম রায়ের ছেলে বিকাশ চন্দ্র রায়।

সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য

শনিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বাড়ি ফিরলেন তারা। কিন্তু অন্য দিনের মতো নয়। আজ তাদের দেখার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন এলাকাবাসী। কিন্তু সবাই ভগ্ন হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কারণ এটাই যে শেষ দেখা। আর কোনোদিন তাদের দেখা মিলবে না।

তাই তো কাভার্ডভ্যান থেকে যখন তাদের নামানো হচ্ছিল তখন চারদিক থেকে ভেসে আসলো কান্নার রোল। শুধু কি জ্ঞাতিগোষ্ঠী, রাজবাড়ি কর্নময়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

হ্যাঁ পাঠক, বলছি সেই ১৩ হতভাগ্য শ্রমিকের কথা। যারা শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কয়লাবোঝাই ট্রাকের চাপায় মারা যান। সেখানেই কাজী ব্রিকস ফিল্ডে কাজ করতেন তারা। সারাদিনের খাটুনি শেষে পরিশ্রান্ত শরীরগুলো যখন অঘোর ঘুমে, ঠিক তখনই ইটভাটারই কয়লাবোঝাই ট্রাক উল্টে তাদের ওপর পড়ে। এরপর আর তাদের ঘুম থেকে জেগে উঠা হয়নি।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বাসিন্দা তারা সবাই। আজ সকালে তাদের লাশ উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের রাজবাড়ি কর্নময়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

https://www.youtube.com/watch?v=FAJ-T1LdmDQ

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment