হতাশায় ডুবছে ২৬ লাখ বেকার , অর্থ ছাড়া মিলছে না সরকারি চাকরি

হতাশায় ডুবছে ২৬ লাখ বেকার , অর্থ ছাড়া মিলছে না সরকারি চাকরি

brand bazaar

দেশে যত বেকার বাড়ছে তত পদ নেই। আর সরকারি শূন্যপদের অবস্থা আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশায় দিন গুনছে ২৬ লাখ বেকার। এদের মধ্যে গ্রাজ্যুয়েশন সম্পন্ন বেকাররা বড় বিপাকে। তারা সরকারি চাকরির আশায় ৪ থেকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে করতে বয়স শেষ করে ফেলছে। এরপর প্রাইভেট চাকরিতে লাগছে রিলেটিভের বড় কোনো সুপারিশ। এতে করে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ চাকরি প্রত্যাশি হতাশায় ভুগছেন।

হতাশায় ডুবছে ২৬ লাখ বেকার , অর্থ ছাড়া মিলছে না সরকারি চাকরি

এরকমই একজন হতাশ বেকার জাকির হোসেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আর তিনদিন পরই সরকারি চাকরির বয়স শেষ। এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরি হলো না। অগ্রণী ব্যাংকে চাকরির অনেক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সেটাও আবার মামলার কারণে ঝুলে আছে। কি করব ভেবে না পাই পথ হারিয়ে কোন বনে যাই অবস্থা। এদিকে মনে বড় দুঃখ নিয়ে বসে আছেন সদ্য গ্রাজ্যুয়েশন শেষকারীরাও। কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ শিক্ষিত বেকার চাকরির আশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। তবে বেকারদের অনুপাতে সে ধরনের কর্মখালি না থাকার কারণে সবাইকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়।

এছাড়াও চলে ঘুষ, মন্ত্রী-এমপি ও মামা-খালুর জোর তদবির। আবার কোথাও কোথাও দেখা যায় এলাকার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড। এরফলে বেশিভাগ চাকরি প্রত্যাশি হতাশায় থেকে যায়। ভাগ্যে চাকরি নামের সোনার হরিণ আর জোটে না। অপরদিকে সরকারি চাকরির প্রত্যাশায় আরো ভয়াবহ অবস্থা বলে অভিমত দিয়েছেন বেশ কয়েকজন চাকরি প্রার্থী। তারা বলছেন, একটা সরকারি চাকরির সার্কুলার হলেই সেখানে ঝাপিয়ে পড়ে লাখো বেকার। দেখা যায় সেসব সরকারি সার্কুলারে পদ সংখ্যাও অনেক কম থাকে। আবার চলে বিশাল অর্থের দেনদরবার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর এক ছাত্র জানান, চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে ভেবে চলতি বছরে জনপ্রশসন মন্ত্রণালয়ে অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই। ভাইভা অনেক ভালো হয়। তবে চাকরিটা কপালে মিলেনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সামান্য অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য পরে শুনতে পারলাম সেখানে নাকি ১০ লাখ টাকার বিশাল অংকের লেনদেন হয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য সরকারির চাকরির আশা করাটাই পাপ।

কারণ ভালো লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা দিয়েও কোনো লাভ নেই। সরকারি হিসেবে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ উল্লেখ করলেও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে এর দ্বিগুণ উল্লেখ করছে। চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের যুব-বেকারত্ব বিষয়ক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের যুবসমাজের ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেকার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই হারে বেকার রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৬ লাখ বেকার রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ যুবক-যুবতী। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের যুব শ্রমশক্তি ধরে প্রতিষ্ঠানটি।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, এ বয়সী ১৯ লাখ ৩৯ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ করে না। এই বয়সসীমার বাইরেও রয়েছে অসংখ্য বেকার। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। আর বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতক পাস লোকই বেকার। গত ২০ নভেম্বর সংসদে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক বলেছেন, দেশের সরকারি অফিস, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসমূহে বর্তমানে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১ টি পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার কারণে নিয়োগ বিলম্বিত হয়। সময়মত আমরা নিয়োগ দিতে পারছি না।

অপরদিকে আইনি জটিলতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রায় ২০ হাজার জনবল নিয়োগ আটকে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় এ বিষয়ে খবর নিতে গেলে একজন কর্মকর্তা  বলেন, সামরিক শাসনামলে জারি করা বিধি আদালতের নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে। ১৯৮৫ নিয়োগবিধির কোনো বৈধতা না থাকায় স্বাস্থ্য খাতে ২০ হাজার জনবল নিয়োগ বন্ধ আছে। তিনি বলেন, নিয়োগবিধির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়াও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাদ্য অধিদপ্তরে আইনি জটিলতায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নিয়োগ আটকে আছে। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা খাদ্য অধিদপ্তর নয়, প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-অধিদপ্তরেই নিয়োগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি জটিলতা রয়েছে নিয়োগবিধি নিয়ে। সামরিক শাসনামলে জারি করা আইন ও বিধিবিধান পরিবর্তন করা হচ্ছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে। কিন্তু নতুন নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করার কাজে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও অধিদপ্তরে শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment