হুমায়ুন ফরীদিকে হারানোর ১০ বছর আজ

২০১২ সালের আজকের দিনে (১৩ ফেব্রুয়ারি) না ফেরার দেশে চলে যান মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। আজ (বোরবার) তার মৃত্যুর ১০ বছর পূর্ণ হলো। শারীরিক মৃত্যু হলেও নিজ কর্মের মাধ্যমে আজও ভক্তদের মনে বেঁচে আছেন দাপুটে এই অভিনেতা।

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র-তিন মাধ্যমেই ৩ দশক ধরে সমান তালে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন হুমায়ুন ফরীদি। উপহার দিয়ে গেছেন বহু আলোচিত, জনপ্রিয় ও প্রশংসিত কাজ। যে কাজগুলোর জন্য আজও সবাই তাকে স্মরণ করেন। বিশেষ করে জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীর সময়টায় তাকে নিয়ে আরও বেশি চর্চা হয়।

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় হুমায়ুন ফরীদির জন্ম। ছাত্রজীবনে মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু। টিভি নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে-‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘ভবের হাট’ প্রভৃতি ।

হুমায়ুন ফরীদি প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন ১৯৬৪ সালে, কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটকে। মঞ্চে প্রথম নির্দেশনা দেন স্কুল জীবনে, ‘ভূত’ নাটকে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক-‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। টিভি নাটক অথবা মঞ্চে সেলিম আল দীন এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু জুটির বাইরে হুমায়ুন ফরীদির সর্বাধিক সংখ্যক এবং সর্বাধিক সফল কাজ ছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকে তার অভিনীত চরিত্র ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রটির কথা আজও সমানভাবে মনে রেখেছেন দর্শক।

চলচ্চিত্র তার প্রথম অভিনয় তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’য়। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো-‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’। ‘সন্ত্রাস’ সিনেমার মাধ্যমে খলনায়ক চরিত্র শুরু হয় তার।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন হুমায়ুন ফরীদির । তখন এ বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাদের একটি কন্যাসন্তান। যার নাম দেবযানি। এরপর তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। তবে ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান হুমায়ুন ফরীদি। এছাড়া ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন