‘হেরে গেলাম তোমার মিথ্যা ভালোবাসার কাছে’ চিরকুট লিখে নার্সের আত্মহত্যা

‘হেরে গেলাম তোমার মিথ্যা ভালোবাসার কাছে’ চিরকুট লিখে নার্সের আত্মহত্যা

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নার্সিং হোস্টেল থেকে গত ১৬ জানুয়ারি লাইজু আক্তার (২৭) নামে এক নার্সের নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

হোস্টেলের ষষ্ঠ তলার বাথরুমে তার ওড়না পেঁচানো মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় লাইজুর স্বামী সুজন পারভেজ মামলা করেন শাহবাগ থানায়। এতে আসামি করা হয়েছে লাইজুর পরকীয়া প্রেমিক মো. তানভীরকে (৩২), ঘটনার পর থেকেই পলাতক তিনি।

আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোট লিখে গেছেন লাইজু। তাতে লেখেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি, লতা আর সুজন মিলে আমার জীবনটাকে শেষ করে ফেলেছে। যেখানে সম্মান নেই, সেখানে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া সমান। মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য এতটা নিচে নামতে পারে তা আগে বুঝতে পারিনি তানভীর। আমার সম্মান মাটির সাথে মিশিয়ে দিল আর তুমি তাকে এভাবে কাছে টেনে নেবে বুঝতে পারিনি। আমার দোষ ছিল না। হাজার কষ্টের মাঝেও সত্যি আর পারলাম না। হেরে গেলাম তোমার ভালোবাসার কাছে। ভালো থেকো সবাই। আমার এক্সিডেন্টের জন্য কেউ দায়ী নয়। ভালো থাকো সাথী। সত্যি তোমার তুলনা হয় না।’

লাইজুর আত্মহত্যার পেছনে তানভীরের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার উস্কানিতেই লাইজু স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে তানভীরের মা ও তার স্ত্রী লতা সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন লাইজুর, এমন অভিযোগ উঠেছে। লাইজু ও সুজনের পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার সিঙেরবাড়ির লাইজুর সংসারে দুই বছরের ছেলে আছে। ব্যবসায়ী সুজন থাকেন মিরপুরে। লাইজুর কর্মস্থল হাসপাতালের শিশু সার্জারির পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে হওয়ায় নার্সিং হোস্টেলে থাকতেন।

ডিএমপির রমনা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘তদন্তে মনে হয়েছে মৃত্যুর পেছনে পরকীয়া প্রেম জড়িত। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। দ্রুত আসামিকে গ্রেফতার করা হবে।’

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের তানভীরকে বিএসএমএমইউতে লিফটম্যানের চাকরি দেন লাইজু। এরপর তাকে উত্ত্যক্ত করত তানভীর। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও করেন লাইজু। এর তিন মাস আগে লাইজুকে ধর্ষণও করে তানভীর। পরে তা পারিবারিকভাবে মীমাংসা করা হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তাদের নিয়মিত মেলামেশা হলেও লাইজুকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে চাইত না তানভীর। পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তানভীর যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে স্বামীর সঙ্গেও লাইজু যোগাযোগ বন্ধ রাখেন।

লাইজুর স্বামী সুজন বলেন, সব সময় লাইজুকে উত্ত্যক্ত করত তানভীর। আমাকে সে বলত, তানভীর ব্ল্যাকমেল করছে তাকে। একপর্যায়ে তারা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। অনেক অনুরোধ করলেও তারা সম্পর্ক চালিয়ে গেছে। তানভীরের স্ত্রী লতাও বিষয়টি বলে আমাকে। আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা করেছি।

এদিকে আত্মহত্যার আগে স্বামী সুজন, প্রেমিক তানভীর ও মাকে বেশ কিছু এসএমএস করেন লাইজু। সেখানে স্বামী সুজনের ফোনে করা এসএমএসে লেখেন, সুজন আমাকে মাফ করে দিও, ছেলেকে দেখে রেখ, কাছে রেখ।

প্রেমিক তানভীরকে লেখেন, তুমি আমাকে যে কষ্ট দিছো তারপর আর বেঁচে থাকার সাধ থাকে না। হেরে গেছি আমি, তোমার মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কাছে। তোমার মিথ্যা ভালোবাসার কাছে হেরে গেছি। সব শেষ করে দিলাম, ভালো থাকো। ভালো থাকো তুমি, তোমার ফ্যামিলি। আমাকে আর কারো কাছে খারাপ করো না।

লাইজু তার মাকে এসএমএস করেন, মা, আমার কপাল খুব খারাপ। আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমার বাবা নেই বলে আজ এ করুণ পরিণতি। এত যুদ্ধ করে চলা যায় না।

আপনি আরও পড়তে পারেন