হোসেনপুরে গবাদিপশুর প্রাকৃতিক প্রজনন খামার।

হোসেনপুরে গবাদিপশুর প্রাকৃতিক প্রজনন খামার।
মাহফুজ হাসান,স্টাফ রিপোর্টার:
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সিদলা ইউনিয়নের অন্তর্গত সাহেবের চর গ্রামের নয়া পাড়ায়, বাড়ীতে গবাদিপশুর প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র তৈরি করে স্বাবলম্বী আছর আলী।
 সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার সাহেবের চর নয়াপাড়ায় দেশি-বিদেশি গরু-ছাগলের মাধ্যমে পাল দিয়ে জীর্ণ জীবনের অবসান ঘটিয়ে বেশ স্বাবলম্বী পর্যায় পৌছেছেন আছর আলী । তার বাবার নাম মৃত উমর আলী।
জানা যায়- ষাঁড় এর বীজ প্রাকৃতিক উপায়ে কিংবা সরবরাহ করে গাভীর জরায়ুতে স্থাপন করার মাধ্যমে প্রজনন ক্রিয়া সম্পন্ন করাকেই গাভীতে পাল দেয়া বলে। মূলত দু’টি উপায়ে গাভীতে পাল দেয়া হয়। যথাঃ
১. প্রাকৃতিক পদ্ধতি
২. কৃত্রিম পদ্ধতি
১। প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ  বকনা বা গাভীর ( স্ত্রী গরু) সঙ্গে প্রজননক্ষম ষাঁড়ের ( পুরুষ গরু ) মিলনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়।
২। কৃত্রিম পদ্ধতিঃ এক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে ষাঁড়ের বীর্য বকনা বা গাভীর জননতন্ত্রে প্রবেশ করানো হয়। বকনা বা গাভীর ক্ষেত্রে মলদ্বার যোনি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পাল দেয়ার সুবিধাঃ
১। প্রাকৃতিকভাবে পাল দেয়ার সময় ষাঁড়ের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে ষাঁড় থেকে গাভীতে কোন রোগ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
২। এ পদ্ধতিতে ষাঁড় এবং গাভী উভয়েরই সমান অংশগ্রহণ থাকে, ফলে প্রজননের সফলতার হার বেশি থাকে। কারণ ষাঁড়ের বীজ গাভীর জরায়ুতে পৌঁছায় বলে গাভী গর্ভবতী হতে সহজে ব্যর্থ হয় না।
৩। কোন গাভী গরম তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়।  এর জন্য আলাদা করে মনোযোগ দিতে হয় না। ষাঁড় নিজ থেকেই গরম গাভীকে চিহ্নিত করে থাকে। তাই প্রজনন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সহজ হয়।
আছর আলীর প্রজনন খামারে বর্তমানে ১ টি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়,১ টি অস্ট্রেলিয়ান ষাড় ও দুইটি দেশি ষাঁড় এবং ১ টি বিদেশি ছাগল ও তিনটি দেশি ছাগল রয়েছে।২০ বছর পূর্বে তিনি অন্যের কাছ থেকে লোন নিয়ে এই প্রজনন খামার তৈরি করেন।প্রাথমিক ভাবে ১ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে এই খামার প্রতিষ্ঠা করে, এক পর্যায়ে তিনি দেনা শোধ করে আয় থেকে খামারের প্রসার ঘটায়।দুটি মেয়ে একটি ছেলের বিবাহত্তর অনুষ্ঠান বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই করেন,এছাড়াও  দু-তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছেন, ভবনের এর কাজ প্রায় শেষের দিকে।বর্তমানে দুই স্ত্রী,  ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনীসহ বেশ আয়েশী জীবনের দখলে আছেন, যার আয়ের উৎস এই প্রজনন খামার।
 জানা যায়- আছর আলীর খামারে প্রতিদিন আসে ৫০০০-৬০০০ হাজার টাকা।গো-ছাগলের পিছনে খরচ হয় ২০০০-২৫০০ টাকা।
দৈনিক আয় হয় গড় হিসেবে ৩০০০-৩৫০০ টাকা।আছর আলীর তত্বমতে জানা যায়- আগামী কুরবানী ঈদে বিদেশি দুই গরু বিক্রি করে দিবেন,একটার সাথে মোটরসাইকেল অন্যটির সাথে ৩০/৩৫ হাজার টাকা মূল্যের খাসি ফ্রী দিবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফিকুল মিয়া বলেন,কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া,কিশোরগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের নান্দাইল, গফরগাঁও, পাগলাসহ লোকজন আসে আছর আলী চাচার খামারে গরু-ছাগলের পাল দেওয়াতে।এটা আমাদের জন্যও সুখবর হাতের কাছেই সহজে সেবা পাচ্ছি।কম খরচে গবাদিপশুর পাল দেয়াতে পারছি।
উক্ত প্রজননক্ষেত্রের মালিক আছর আলী জানান,২০ বছর ধইরা এই কাজের লগে জড়িত আছি,পয়লাবেলা অন্যের ঠায়তে ঋন কইরা এই খামার ছোডো ভাবে, দুইডা হার(ষাঁড়) দিয়া শুরু করছিলাম।বর্তমানে আমার খামারে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টেহার মাল(গরু-ছাগল)আছে পাল দেয়ার জন্য।অহন আল্লাহর রহমতে সবকিছুই নিজের। ছেরাইন-ছেইরান বিয়া দিছি, দুই তালা একটা ঘর করতাছি,।সব এই ব্যবসার আয় থাইকায়।
টেহা পয়সা লয়া আমার লগে কেউর বাজা  বাজি অয়না,আমার সেবার মান কেউ খারাব কইতারতুনা।
উপজেলার সিদলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন(এম এ) জানান,আমাদের সাহেবের চরে গবাদিপশুর এমন একটা প্রাকৃতিক প্রজনন খামার গড়ে উঠেছে এটা ভালো উদ্যোগ। আমি যতদূর জানি দূর- দূরান্ত থেকেও অনেক গবাদিপশু আসে প্রজনন করাতে।স্থানীয় গ্রামসহ প্রতিবেশী গ্রামসমূহের গবাদিপশু পালকদের জন্যও একটা বড় সুযোগ, সহজে হাতের কাছে সেবা পাচ্ছে।
হোসেনপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা:মোঃ উজ্জ্বল হোসাইন জানান,আমি উপজেলায় নতুন আসছি, আপনাদের কাছে এ খামার সম্পর্কে প্রথম জানলাম। তবে এটা ভালো উদ্যোগ।উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে গবাদিপশুর প্রাকৃতিক প্রজনন খামার গড়ে তুললে ঔষধপত্রসহ পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও তিনি জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন