হোসেনপুরে নতুন ধানের গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক।

হোসেনপুরে নতুন ধানের গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক।
মাহফুজ হাসান,স্টাফ রিপোর্টার:
“সবুজ রঙের মায়ায় কৃষক মোদের ফলিয়েছেন ধান, দেখতেই তো যেনো মনে জাগে মধুর সেই অনুভূতি”
সত্যিই তাই সবুজের মায়ায় কৃষক মাঠময় সাজিয়েছে সোনালী ধানের শীষে।
 কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনারোদ। শেষ হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা সোনালী ধান।
লেজঝোলা ফিঙে আর শালিক ঝগড়া করে, তারপর উড়ে যায়। এসব কিছুই দেখার ফুরসত নেই যেনো কৃষকের! মাঠের পাকা ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়।
বুধবার(৩০ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়,
সে কাজেই ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের কৃষকেরা।এবার উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।এখন চলছে মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব।নবান্নের আমেজে চলবে পিঠা-পুলির উৎসব ঘরে ঘরে এমনটায় জানান দিচ্ছে মফস্বলে।আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি।
শিশিরের ভারে হেলে পড়েছে ধান। ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পান্তা খেয়ে কাস্তে হাতে কৃষক মাঠে ছোটেন সেই ধান কাটতে। ধান কাটার সময় তারা কেউ কেউ বেহুলা লখিন্দর,গরু উপায় বলো নাসহ বিভিন্ন লোক সংগীত গেয়ে ওঠেন।
তাদের গানে যেন মুগ্ধ হয়ে  শালিকের ঝাঁক দেয় কিচির-মিচির ডাক! ধানের পাঁজা মাথায় নিয়ে কৃষক যখন আইল পথে পায়ের ছাপ এঁকে হেঁটে যান তখন যেন মনে হয় সূর্যের আলোয় কৃষকের মাথায় স্বর্ণ দানা চিকচিক করছে।
হেমন্তের বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। দিনভর কয়লা খাটুনি খেটে ধান কাটার পর মাড়াই শেষে ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন কৃষাণি বধূরাও। আর এভাবেই দেখতে দেখতে গোলা ভরে উঠছে কৃষকের।
গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্ন উৎসব
ঋতুচক্রের নিয়মেই হেমন্তের হাত ধরে আসে নবান্ন। গ্রামবাংলার মাঠে-খেতে চলছে আমন ধান কাটার মহোৎসব নবান্ন। যা নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে পাওয়া চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়।
নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্যমেলায়।
জানা যায়,সোনালী ধানে ছেয়ে গেছে মাঠ। এবছর আমন ধান চাষ সুখকর ছিল না। অনাবৃষ্টি ও জ্বালানি তেলের সংকটে সঠিক সময়ে অনেকেই ধান চাষ করতে পারেনি। তবে নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখন সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করছে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠছে কৃষাণীর শূন্য গোলা। ধান বিক্রিতে পরিশোধ হবে দেনা ঋণের বোঝা, মিটাবে সংসারের ভরণপোষণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও নতুন জামার বায়না, কৃষাণীর গায়ে জড়াবে নতুন শাড়ি।শীতের থেকে বাঁচতে কিনবে উস্ন কাপড়।
উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের  মহসিন হক তার পাঁচবিঘা জমিতে এবার আমন ধান চাষ করেছিলেন। ভালো ফলনে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে। প্রত্যুষে কাক ডাকা ভোরে খেতের আইলে- আইলে ঘোরে ধান ফলানোর স্বপ্নে বিভোর থাকা কষ্টটা যেন স্বার্থক হলো।
এ বছর সার ও জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমূখি থাকায় আমন ধানের কম আবাদ করেছেন। কিন্তু খুবই ভালো ফলন হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির চার বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। নিজ জমিতে ধান কাটতে গিয়ে বলেন, সিত্রাং প্রভাবে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ছে। তবুও ফলন খুব ভালো হয়েছে।
চরকাটিহারী গ্রামের কৃষক রনি মিয়া,বিশ্বনাথ পুরের মোঃ জাকির,গড়বিশুদিয়া গ্রামের রিয়াদ হোসেনসহ অনেকে জানান,
যথাসময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় ফলন হয়েছে ঢের,তবে চাষাবাদ সংশ্লিষ্ট দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ব্যাপক চাপে ফেলেছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল কায়েস জানান, এবছর উপজেলায় ৭হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম আমন আবাদ হয়েছে।তবে হোসেনপুরে ভালো ধান উৎপাদন হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন