হয় ছাড়তে হচ্ছে ইসলাম ধর্ম, না হয় বাড়িঘর

হয় ছাড়তে হচ্ছে ইসলাম ধর্ম, না হয় বাড়িঘর

হয় ইসলাম ধর্ম ছাড়ছে, না হয় বাড়ি ছাড়ছে। এই হলো পার্বত্য নওমুসলিমদের বর্তমান অবস্থা। বান্দরবানে নওমুসলিম ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে হত্যার পর দেশের পার্বত্য এলাকার নওমুসলিমদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দু-একটি পরিবার এখনো যারা টিকে আছে, তারা নিজেদেরকে চরম নিরাপত্তাহীন ভাবছেন। এ দিকে ওমর ফারুক হত্যায় জড়িতদের কেউ এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক আরো বাড়ছে।

বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম তুলাছড়ির বাসিন্দা ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে গত ১৮ জুন রাতে নিজ ঘর থেকে বের করে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। ওমর ফারুক পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। সনাতন ধর্ম থেকে প্রথমে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হন। পরে ২০১৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তুলাছড়ির নিজ এলাকাতেই মসজিদ গড়ে তুলে সেখানে ইমামতি করে আসছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, মুসলমান হওয়ার পর পূর্ণেন্দু ত্রিপুরার নাম রাখা হয় ওমর ফারুক। ১৮ জুন রাতে এশার নামাজের ইমামতি করে বাসায় ফেরার পর কিছু দুর্বৃত্ত হত্যা করে ওমর ফারুককে। এই ঘটনায় ২০ জুন নিহতের স্ত্রী নওমুসলিম রাবেয়া বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনের অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করা হয়। ওমর ফারুক ত্রিপুরার মেয়ে আমেনা ত্রিপুরা গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার রাতে দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়ির সামনে এসে তার বাবাকে ডাকে। তার বাবা বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা জানতে চায়, তোমার জমিনে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছো, তুমি মুসলিমদের নেতা? এমন প্রশ্নের জবাবে তার বাবা হ্যাঁ বলার সাথে সাথে সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি গুলি করে তাকে হত্যা করে। সারা রাত তার লাশটি ঘরের সামনেই পড়েছিল। এই ঘটনার সময় রাতে ওই এলাকার কোনো মানুষ ঘরের বাতি পর্যন্ত জ্বালায়নি।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ওমর ফারুককে হত্যার পরও পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা থেমে নেই। তারা অন্যও নওমুসলিম পরিবারগুলোকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের হুমকিতে অনেক পরিবার ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে আগের ধর্মে ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, তুলাছড়িতে আগে ১১টি মুসলিম পরিবার ছিল। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে ছয় পরিবার ইতোমধ্যে খ্রিষ্টান ধর্মে ফিরে গেছে। ওমর ফারুকের পরিবারসহ অন্য যে পাঁচটি পরিবার এখনো ইসলাম ধর্মে টিকে আছে তারা কেউ এলাকায় নেই। সবাই যে যার মতো অন্য কোথাও গিয়ে অবস্থান করছেন। নারেংপাড়ায় পাঁচ নওমুসলিম পরিবার ছিল, যাদের মধ্যে তিন পরিবার প্রাণে বাঁচতে আগের ধর্মে ফিরে গেছে। সাধু হেডম্যান পাড়ায় আট পরিবার ইসলাম গ্রহণ করলেও সন্ত্রাসীদের হুমকিতে ছয় পরিবার আগের ধর্মে ফিরে গেছে। শিলবান্ধা পাড়ায় পাঁচ পরিবার ইসলাম গ্রহণ করলেও বর্তমানে তিন পরিবার আছে। বাকিরা আগের ধর্মে ফিরে গেছে। সূত্র জানায়, যে পরিবারগুলো এখনো টিকে আছে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই পরিবারগুলোর বেশির ভাগই নিহত ওমর ফারুকের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

Brand bazaar

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ওমর ফারুক খুনিদের কেউ এখনো গ্রেফতার হয়নি। যে কারণে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া। তারা নওমুসলিমদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সবাই চরম ভয়ের মধ্যে আছেন। এমনকি সাধারণ পাহাড়িরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হলে নওমুসলিমসহ এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসতো বলে একাধিক বাসিন্দা জানান।

এ দিকে সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়ার ব্যাপারে থানার ওসি তৌহিদ কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, এলাকাটি খুবই দুর্গম। থানা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামের অবস্থান। এর মধ্যে এমন এমন স্থান রয়েছে, যেখানে হেঁটে যেতে একটি পা ফেলার জায়গাটুকু আছে। পাশে বিশাল পাহাড়ি গর্ত। যে কারণে ওই এলাকায় যাতায়াত করা স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। ওসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নওমুসলিমদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ওসি বলেন, সে ব্যাপারেও তারা সজাগ আছেন।

নিহত ওমর ফারুকের পরিবার অভিযোগ করেছে, তারা ইসলাম গ্রহণ করার পরেই জনসংহতি সমিতির একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদেরকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এর মধ্যে সাবেক এক জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। তারাই ওমর ফারুককে হত্যা করেছে। জানা গেছে, ওই জনপ্রতিনিধিসহ যাদেরকে এই হত্যার ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে তারা এখনো এলাকাতে প্রকাশ্যে ঘুরছে কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছে না। এতে মানুষ আরো ভয়ের মধ্যে আছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন