২০০৭ এর স্মৃতি ফেরাতে বাংলাদেশের দরকার ১৪৩

২০০৭ এর স্মৃতি ফেরাতে বাংলাদেশের দরকার ১৪৩

শিকল ভাঙার বার্তা দিয়ে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে গেছে বাংলাদেশ দল। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর এই ফরম্যাটে যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছে টাইগাররা, কোনো ম্যাচেই জয় নেই টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে। এবার সেই ‘দেয়াল’ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেও সুবিধা করতে পারছে না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা দুই ম্যাচ হারের পর আজ (শুক্রবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

উইন্ডিজকে পেয়ে বাংলাদেশের সামনে সেই ২০০৭ সালের স্মৃতি ফেরানোর সুযোগ। মাঠ ও মাঠের বাইরে বিধ্বস্ত টাইগারদের এ ম্যাচে ‘একাগ্রতা’ আর ‘জয়ের ক্ষুধা’ চোখে পড়ার মতো। ম্যাচের শুরু থেকেই খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শারজাহতে ম্যাচটি জিততেই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপ মিশনে টিকে থাকতে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ১৪৩ রান।

সুপার টুয়েলভের গ্রুপ-১ এ একেবারেই ভালো অবস্থানে নেই ক্যারিবীয়ারা। তাদের মতোই দুই হারে টেবিলের তলানির একটু আগে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। টিকে থাকার মিশনে আজ একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। যেখানে হারলেই কার্যত শেষ হবে যাবে সেমিফাইনালের আশা।

সে লক্ষ্যে টস ভাগ্য হাসে বাংলাদেশের হয়ে। টস জিতে প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাট করতে পাঠান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ একাদশে দুটি পরিবর্তন। নুরুল হাসান সোহান ও নাসুম আহমেদের পরিবর্তে একাদশে সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ।

ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ক্যারিবীয়দের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজুর রহমানের লেংথ ডেলিভারিটি গায়ের জোরে উড়িয়ে মারতে যান ওপেনার এভিন লুইস। কিন্তু বল পিচে পড়ে একটু দেরিতে আসে ব্যাটে। কানায় লেগে বল উপরে উঠে যায়। স্কয়ার লেগ থেকে এসে মুঠোবন্দি করেন মুশফিকুর রহিম। ৯ বলে ৬ রানে ফেরেন লুইস।

এই ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য রান আউট হতে পারতেন ক্রিস গেইল। মুস্তাফিজের আলতো বলটি পয়েন্টের দিকে ঠেলে রান নিতে চান গেইল। তবে মাঝ পিচ থেকে তাকে ফিরিয়ে দেন লুইস। অনেক সময় পেয়েও সরাসরি থ্রো স্টাম্পে লাগাতে ব্যর্থ সাকিব। তাতে লিটনেরও দোষ আছে বৈকি! স্কয়ার লেগ থেকে সাকিব যখন বলটা ছুঁড়ছেন স্টাম্পে, ‘বেসিক’ ব্যাক আপটা নেননি তিনি। নিলে হয়তো দৃশ্যটা অন্যরকমও হতে পারতো! তবে গেইল টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। অফ স্পিনে ‘কাবু’ এই কিংবদন্তিকে নিজের ফাঁদে ফেলেন শেখ মেহেদী হাসান। গেইল আউট হন ১০ বলে ৪ রান করে।

বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেট মাত্র ২৯ রান তুলতে পারে উইন্ডিজ। সপ্তম ওভারে মেহেদীকে ফিরতি ক্যাচ দেন অভিষেক ক্যাপ পাওয়া রোস্টন চেজ। তবে সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মেহেদী। ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন পান চেজ। সে বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তের জায়গা বদল করেন শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গে। মেহেদীর করা পরের বলটি উড়িয়ে মারতে যান হেটমায়ার। ব্যাট-বলে ভালো সংযোগ না হওয়ায় সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ৯ রান করে।

দলীয় ৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ক্যারিবীয়রা। দলকে বিপদ মুক্ত করতে লড়াই চালান চেইস আর অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। তবে রান তোলার গতি বাড়ছিল না কিছুতেই তাদের। একপর্যায়ে ১৬ বল খেলে ৮ রানে ব্যাট করা অবস্থায় স্বেচ্ছা অবসরে যান পোলার্ড। তার পরিবর্তে ক্রিজে আসেন আন্দ্রে রাসেল।

তবে ভাগ্য এদিন যেন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। আন্দ্রে রাসেলকে পা দিয়ে রান আউট করেন বোলার তাসকিন আহমেদ। চেজের স্ট্রেট ড্রাইভে বল তাসকিনের পায়ে লেগে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে আঘাত করে। তখন লাইনের বাইরে ছিলেন রাসেল। কোনো বল না খেলেই সজঘরে ফিরতে হলো এই হার্ডহিটারকে। উইন্ডিজকে রীতিমত কোণঠাসা করে ফেলে বাংলাদেশ দল।

যদিও নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার হাত ঘোরাতে এসে মিডউইকেটে চেজকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন সাকিব। তবে সেখানে বলের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ‘লোপ্পা’ ক্যাচ ছেড়ে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো জীবন দেন মেহেদী। পরের বলে লিটন দাস স্টাম্পিং মিস না করলে নিকোলাস পুরানের উইকেটে পেতে পারতেন সাকিব। নিজের ৪ ওভারের কোটায় ২৮ রান খরচ করে কোন উইকেটে দেখা পাননি তিনি।

শেষদিকে চাপ থেকে বেরিয়ে এসে উল্টো টাইগার বোলারদের উপর চড়াও হন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। পুরান ঝড় তোলেন ব্যাট হাতে। ইনিংসের ১৯তম ওভারে বিধ্বংসী পুরানকে থামান শরিফুল ইসলাম ২২ বলে ১ট চার ও ৪টি ছয়ের মারে ইনিংস সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে পুরানের ব্যাট থেকে। পরের বলেই শরিফুলের শিকার একপ্রান্ত আগলে খেলা চেজ। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান বোল্ড হন ৪৬ বলে ৩৯ রান করে। একই ওভারে ফিরতে পারতেন জেসন হোল্ডারও। তবে ফসকে যায় ক্যাচ।

শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে ব্রাভো আউট হওয়ার পর পোলার্ড আবার ব্যাটিংয়ে নামলেও তেমন সুযোগ পাননি। তার ১৪ রানের সঙ্গে হোল্ডারের ৫ বলে ১৫ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে উইন্ডিজের সংগ্রহ ১৪২ রান। সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান। টাইগারদের হয়ে শরিফুল, মেহেদী, মুস্তাফিজ প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট নেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন