জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলনের সাত বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারী শুরু হওয়া আন্দোলনের নতুন মাত্রা পেয়েছে ২০১৬ সালের ১ আগস্ট। আবাসিক সংকট নিরসন ও কেন্দ্রীয় কারাগারের জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করে সেখানে নতুন হল নির্মাণের দাবিতে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবি লালফিতার অদৃশ্য বাঁধায় আটকে যায় প্রতিবারই, এমনটাই মত শিক্ষাবিদদের।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য মেজবাউদ্দিন আহমেদ জবির বেদখলকৃত সম্পত্তির তালিকা জানার জন্য একটি টিম গঠনের মাধ্যমে ২৮ লাক্ষ টাকা খরচ করে। সেখানে ১০টি হলের নাম উঠে আসে। যা বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনের দখলে রয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন পর্যন্ত একটি হলও দখল মুক্ত করতে পারেনি তাঁরা। এই হল গুলো হচ্ছে, “(১)তিব্বত (২)শহীদ আনোয়ার শফিক (৩)শহীদ আজমল হোসেন (৪)শহীদ শাহাবুদ্দিন (৫)হাবিবুর রহমান (৬)আব্দুর রহমান (৭)বজলুর রহমান (৮)আব্দুর রউফ মজুমদার (৯)শাহাবুদ্দিন (১০)শহীদ নজরুল ইসলাম হল”।
এদিকে সাত বছরের আন্দোলনে ছাত্রদের পাওনার খাতায় আছে, ২০০৯ সালে ১০০ আর ২০১৪ সালে ৩০০ জন ছাত্র আহত হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে! এবারও এর ব্যত্বয় ঘটেনি, আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রায় কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী মিছিল ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আহত হয় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
অপরদিকে ২২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আনুপাতিক হার অনেক কম। এর কারন হিসেবে শুধুমাত্র আবাসন সমস্যাকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। একই সাথে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রী হলের জমি ও বাজেট থাকার পরও তিন (০৩) বছরে দরপত্র হয়নি, আর এখন ছাত্রদের আন্দোলনের কারনে যতটুকু হয়েছে তা সন্তুস জনক বলছে না কোন শিক্ষার্থীই।
শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ দাবির মধ্যে রয়েছে, দশটি (১০) বেদখলকৃত হল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে আনা। ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা স্থানান্তর ও পরিবহন সমস্যা সমাধান। সদ্য খালি হওয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করে সেখানে নতুন হল নির্মাণ।
উল্লেখ, ২০০৫ সালে অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানের ১১টি হল প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। ২০০৯ সালে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলনে সরকারের উচ্চ মহলের টনক নড়ে। ওই সময় একাধিক হল বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ থাকলেও তা কার্যকর করেনি ঢাকা জেলা প্রশাসন। পরে ২০১১ ও ২০১৪ সালে জোরালো আন্দোলনে দুটি হল পুনরুদ্ধার হলেও তা ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় কারাগারের জমির দাবিতে জবি কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর আবেদন করে। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া মেলেনি। বর্তমানে ছাত্রদের প্রত্যাশা তাদের দাবি গুলো যেন ‘প্রতিশ্রুতির লালফিতা’য় আটকে না যায়।