১১ বছর ধরে চাচার দ্বারা ধর্ষিত ভাতিজা!

১১ বছর ধরে চাচার দ্বারা ধর্ষিত ভাতিজা!

অনেক মানুষকেই ছোটবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কিন্তু কয়জন আর শৈশবের এই দুঃস্মৃতিকে নিজের পরবর্তী জীবনে লড়াইয়ের হাতিয়ার করে তুলতে পারেন? ভারতের মুম্বইয়ের হরিশ আইয়ার কিন্তু পেরেছেন।

৩৭ বছর বয়সি হরিশ বর্তমানে ভারতের প্রথমসারির একজন সমাজকর্মী। সমকামীদের অধিকার রক্ষায় তিনি সক্রিয়, পাশাপাশি শিশু ও পশুদের উপর যৌন নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারেও তিনি সরব।

‘পিংক পেজেস’ হরিশকে ভারতে সমকামীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ দৈনিক ‘দা গার্ডিয়ান’ সারা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন সমকামী-সমর্থক ব্যক্তিত্বের তালিকায় হরিশের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এহেন হরিশকেই তার ছোটবেলায় নিরুপায়ভাবে নিজের নিকট আত্মীয়ের হাতে সহ্য করতে হয়েছিল যৌন নির্যাতন। নিজেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেই দুঃস্বপ্নের মতো শৈশবের কথা বলেছেন হরিশ।

হরিশ জানিয়েছেন, তিনি তার কাকার দ্বারা প্রথমবার ধর্ষিত হন মাত্র ৭ বছর বয়সে। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন ৭ বছর তখন আমাকে একদিন স্নান করানোর সময় আমার কাকা জোর করে আমার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেন।’কিন্তু বিষয়টি একদিনে মিটে যায় না।

তার কাকা নিয়মিত ধর্ষণ করে যান হরিশকে। তারপর যখন হরিশের বয়স ১২ বছর তখন একা কাকা নন, কাকার বন্ধু-বান্ধবদের হাতে গণধর্ষিত হন হরিশ।

১১ বছর ধরে চাচার দ্বারা ধর্ষিত ভাতিজা!

‘ওদের অত্যাচারে আমার গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত ঝরত, কিন্তু তবু আমি মুখ বুজে থাকতাম। কারণ সেসময়ে আমার মনে হত, আমি পুরুষ, অতএব মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করে যাওয়াই আমার ধর্ম’ বলেছেন হরিশ।

কিন্তু ১৭-১৮ বছর বয়সে পৌঁছবার পরে বোধোদয় হয় হরিশের। তার মনে হয়, এতদিন যা চলে এসেছে তার সঙ্গে তা অন্যায়। সেই সময় একদিন তার কাকা যখন তাকে ধর্ষণ করতে আসেন, হরিশ তাকে লাথি মেরে সরিয়ে দেন, এবং জোর গলায় বলেন, অনেক হয়েছে, আর না। সেই থেকে বন্ধ হয় তার নির্যাতন।

এরপর হরিশ তার মাকে বলেন তার এই ধারাবাহিক নির্যাতনের কথা। তার মা আঁতকে ওঠেন সব শুনে। প্রশ্ন করেন, এতদিন তাকে কিছু বলেননি কেন হরিশ।

হরিশ বলেন, সরাসরি বলতে লজ্জা বোধ করেছিলেন তিনি। তবে আকারে-ইঙ্গিতে মা-কে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মা বুঝতে পারেননি সেই ইঙ্গিতের প্রকৃত অর্থ।

পাশাপাশি মা একথাও বলেন যে, তিনি জানতেনই না পুরুষদের সঙ্গেও এমনটা হতে পারে। ‘তখনই আমার মনে হয়, যৌন নিগ্রহের বিষয়ে পুরুষরা অবহেলিত’, জানান হরিশ।

কিন্তু হরিশের মা পদ্মা আইয়ার প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় নেননি। ২০১৫ সালে ছেলের জন্য ‘পাত্র চাই’ বলে কাগজে বিজ্ঞাপন দেন পদ্মা। এটি ভারতের প্রথম সমকামী বিয়ের বিজ্ঞাপন। অনেক সংবাদপত্রই বিতর্কের ভয়ে বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করতে চায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় বিজ্ঞাপনটি।

কলকাতার সঙ্গেও বিশেষ যোগ রয়েছে হরিশের। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে আক্রান্ত সুজেট জর্ডনের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিলেন হরিশ। প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে, সুজেটের অসুস্থতার সময়েও দাঁড়িয়েছিলেন তার পাশে।

এখন যৌন নির্যাতনে অবহেলিত মানুষদের অন্যতম বলভরসা হরিশ। যে ভীতিকর শৈশব তিনি নিজে কাটিয়ে এসেছেন, তা যেন আর কাউকে যাপন করতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে তৎপর।

শৈশবের অন্ধকার কাটিয়ে উঠেছেন হরিশ। এখন তিনি সক্রিয় অন্য মানুষদের জীবনকে আলোকিত করে তোলার কাজে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment