সামনে দুর্গাপুঁজো। বাকি আর মাসখানেক। আর সেই পুঁজোয় অবশ্যই চাই বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা। অর্থাৎ বেশ্যাপাড়ার মাটি। এমনটাই রীতি। কিন্তু ইদানীং কলকাতায় পুঁজো নিয়ে মাতামাতি হলেও রীতিনীতি মানার ক্ষেত্রে যে শৈথিল্য এসেছে তা বোঝা গেল এই পাড়ায় কথা বলতে এসে।
প্রাচীন এই পাড়ার প্রবীণা বিমলাদেবী (নাম পরিবর্তিত) জানালেন, ‘‘১০-১২ বছর আগেও পুঁজোর আগে আগে মাটি নিতে ভিড় জমাতেন পুঁজো-কর্তারা। এখন কলকাতায় এত পুঁজো, কিন্তু মাটি নিতে আসার ভিড় অনেক কমে গিয়েছে। কলকাতার কিছু পুরনো বাড়ির পুঁজো আর কিছু পুরনো বারোয়ারি ঠিক নিয়ম করে আসে। এমনকী ঠাকুর তৈরি করার আগেও অনেকে নিয়ে যায় মাটি। প্রতিমায় ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু নতুনরা আর আসে না।’’
দুর্গাপুঁজোর আনন্দে কেউ যেন বাদ না পড়ে সেই লক্ষ্যেই হয়তো এই প্রাচীন রীতি। এখন অবশ্য, সোনাগাছির নিজস্ব পুঁজো হয়ে গিয়েছে। আদালতের হস্তক্ষেপে সেই পুঁজো নিয়ে বিবাদও মিটে গিয়েছে। পুঁজোয় মেতে ওঠার জন্য এখন আর অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না এই পাড়ার বাসিন্দাদের।
সোনাগাছির যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি কয়েক বছর আগে যখন দুর্গাপুঁজোর উদ্যোগ নেন, তখন বাধা আসে পুলিশের থেকে। প্রধান কারণ দেখানো হয়েছিল ওই ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় পুঁজো হলে যান চলাচলের অসুবিধা হবে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট-এর দ্বারস্থ হয়ে পুঁজোর অনুমতি আদায় হয়। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘‘যৌনকর্মীদের পুঁজোর অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না।’’
কিন্তু সোনাগাছির অভিমান যদি সত্যি হয়, তবে নতুন বারোয়ারির কর্তারা বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা ছাড়া কীভাবে পুঁজো করছেন? উত্তর পাওয়া গেল পশ্চিমবঙ্গ বৈদিক আকাডেমির প্রধান নবকুমার ভট্টাচার্যের কাছে। ‘দুর্গাপুঁজোর জোগাড়’ বইয়ের লেখক জানালেন, ‘‘শুধু বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকাই নয়, দুর্গাপুঁজোর নিয়ম অনুসারে রাজদ্বারের মৃত্তিকাও লাগে। এছাড়াও লাগে সর্বতীর্থের মৃত্তিকা, গজদন্ত মৃত্তিকা, বৃষশৃঙ্গ মৃত্তিকা ইত্যাদি। সেসব কিছুই তো পাওয়া যায় না। মহামায়ার মহাস্নানের জন্যও ঝরণার জল থেকে সরস্বতী নদীর জলের কথা বলা রয়েছে শাস্ত্রে। কিন্তু সেসব আর কোথায় পাওয়া যাবে! গঙ্গাজলেই সেসব কল্পনা করে নিতে হয় পুরোহিতকে। একইভাবে গঙ্গামাটি দিয়েই বেশ্যদ্বার মৃত্তিকা কিংবা রাজদ্বারের মৃত্তিকার কাজ সারা হয়।’’
তবে সোনাগাছির অভিমানই সত্যি! দশকর্মা ভাণ্ডারে বেশ্যদ্বার মৃত্তিকা বলে যে মাটি বিক্রি হয় সেটাও নাকি আসলে নদী বা পুকুর পাড়ের মাটি। সুত্র-এবেলা