বেঁচে নেই শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর?

বেঁচে নেই শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর?

Brand Bazaar

এখনো তার মাথার ওপর ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ। এখনো তার নামে অনেকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন তার সহযোগীরা। নানা হুমকি-ধমকিতেও যমের মতো ব্যবহার করা হয় তার নাম। কিন্তু তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কিনা, এ নিয়ে রয়েছে ঘোর সন্দেহ। ঢাকার অপরাধজগতের এক সময়ের এই অঘোষিত মুকুটহীন সম্রাটের নাম কালা জাহাঙ্গীর পুরস্কারঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন। রাজধানীর সর্বত্রই ছিল তার সন্ত্রাসের রাজত্ব। কিন্তু এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তার কোনো খবর নেই। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাধিক সূত্রের দাবি, এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ২০০৩ সালের দিকে মারা গেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তাও বলছেন, কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে নেই। কালা জাহাঙ্গীর কবে, কোথায়, কীভাবে মারা গেছেন এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। কেউ বলছেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন, কেউ বলছেন অন্য সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা গেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে জানান, কয়েক বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের কোনো অপতৎপরতার খবর আমাদের কাছে নেই। তবে তার নামে প্রতারকচক্রের অপতৎপরতার খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়।

জানা গেছে, একসময় এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করেছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তশালীরা। এমনকি পুলিশ বাহিনীরও কোনো কোনো কর্মকর্তা কালা জাহাঙ্গীরকে ব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। অথচ এই শীর্ষ সন্ত্রাসী কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়েননি। চলাফেরার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে বহনকারী গাড়ি কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তায় বেষ্টিত থাকত। আর তার অবস্থানের তথ্য ফাঁস ঠেকাতেও এই শীর্ষ সন্ত্রাসী নানা কৌশল অবলম্বন করতেন। কেউ তথ্য ফাঁস করে তার হাতে ধরা পড়লে প্রাণ নিয়ে পালাতে পারতেন না। নিত্যনতুন অস্ত্র ব্যবহার ছিল তার বড় শখ। পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারতে দ্বিধা করতেন না। আইনজীবী হাবিব ম-ল, আদালত পাড়ায় মুরগি মিলন, ওয়ার্ড কমিশনার শাহাদাত হোসেন, ওয়ার্ড কমিশনার নিউটনসহ একডজন চাঞ্চল্যকর হত্যামামলার আসামি কালা জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া অসংখ্য খুন করেছেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী, যেগুলো পুলিশ রেকর্ডে আসেনি। একসময় রাজধানী কাঁপানো এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর কোনো হদিস নেই একযুগ ধরে। কালা জাহাঙ্গীরের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রামপুরার শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহজাদা ২০১০ সালে পুলিশকে বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীর নিজ মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছেন। এর আগে ২০০৮ সালে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক পুলিশকে বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীর ভারতের মুর্শিদাবাদ এলাকায় ২০০৩ সালের দিকে মারা গেছেন। অপর একটি সূত্র বলছে, মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শীর্ষসন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের গুলিতে খুন হন কালা জাহাঙ্গীর। আরেকটি সূত্রের খবর, যশোর সীমান্তে মারা গেছেন কালা জাহাঙ্গীর। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর আর বেঁচে নেই। তবে তার সহযোগীরা বেঁচে থাকার প্রচারণা চালিয়ে ফায়দা লুটতে পারেন। ওদিকে কালা জাহাঙ্গীর এখনো পুলিশের খাতায় এবং আদালতের কাছে ফেরারি আসামি। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বেশকিছু মামলা এখনো বিচারাধীন। কয়েক বছর ধরে ওইসব মামলায় কালা জাহাঙ্গীরের পক্ষে কখনো কোনো তদবির করা হয় না। তবে অন্য আসামিরা তৎপর আছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ঢাকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরে তাদের ধরতে শুরু হয় পুলিশের জোরদার অভিযান। একসময় পিচ্চি হান্নান, কিলার আব্বাস, আইজি গেটের কচি, কাফরুলের সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজসহ আরও অন্তত ২ ডজন ডাকসাইটে সন্ত্রাসী ছিল কালা জাহাঙ্গীর গ্রুপে। তখন এই গ্রুপ ছিল ঢাকার আতঙ্কের আরেক নাম। পরবর্তীকালে পিচ্চি হান্নান ও কিলার আব্বাস নিজেরাই পৃথক বাহিনী গঠন করে আলাদা হয়ে যান। তবে তাদের একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দিনের পর দিন অভিযান পরিচালনা করে। তবে বেশিরভাগ অভিযানের তথ্যই ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান কালা জাহাঙ্গীর। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশের এসি আক্তারুজ্জামান রুনুর টিম আটক করে কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সোনিয়াকে। তখন সোনিয়ার গর্ভে কালা জাহাঙ্গীরের সন্তান। মিন্টো রোড গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী তখন বলেছিলেন, কালা জাহাঙ্গীর তার কাছে মাঝে মধ্যে এলেও ঠিকমতোই বাসাভাড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ বহন করতেন। কালা জাহাঙ্গীর তাকে বলেছিলেন, একশ্রেণির অসাধু রাজনীতিকই তাকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বানিয়েছে। বিনিময়ে তারা সব সময় কালা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করতেন। তাকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে খুন-খারাবি করাতেন। একদিকে পুলিশ যখন তাকে ধরতে অভিযান চালায়, তখন পুলিশেরই সদস্য টাকার বিনিময়ে অভিযানের খবর তার কাছে ফাঁস করে দিতেন বলে কালা জাহাঙ্গীরের স্ত্রী এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন। এদিকে ২০০৪ সালে র্যাব গঠিত হওয়ার পর পিচ্চি হান্নান মারা যান র্যাবের ক্রসফায়ারে। কিলার আব্বাস ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। আর হাবিবুর রহমান তাজকে গ্রেপ্তার করে সিটিএসবি। তবে কালা জাহাঙ্গীরকে কেউ ধরতে পারেনি।

Source –  আমাদেরসময়

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment