গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা!

গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারা!

 

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। রায়ের আগেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। এ কারণে চট্টগ্রাম বিএনপি নেতাদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের অনেক সিনিয়র নেতা গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি ডেটলাইন ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করেছে।

কিন্তু চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। দুই জেলা কমিটির নেতাদের মধ্যে গ্রুপিং থাকায় ঐক্যবদ্ধ কোনো কর্মসূচি হাতে নিতে পারেনি।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহদাত হোসেনের নেতৃত্বে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরে বৃহত্তর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগর যুবদলকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ডা. শাহদাত। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অবস্থান নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নগর বিএনপি।

তবে এসব কর্মসূচি হাতে নিলেও প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহদাত হোসেনকে পুলিশ আপাতত গ্রেফতার না করলেও আবুল হাশেম বক্করকে গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ বিষয়টি বুঝতে পেরে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশের নজরে আছে নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানের ওপর। তাই নগর বিএনপির বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভায় দেখা যায়নি আবু সুফিয়ানকে। এ ছাড়াও নগর যুবদলের প্রথম সারির নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন গ্রেফতার এড়াতে। তবে নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজউল্লাহকে প্রকাশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

এদিকে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারিকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দলের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েলের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি। এমনকি দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঘোষণা দেননি।

জানা যায়, একই অবস্থা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপিরও। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী জেলে। সদস্য আবুল হাসান মারা গেছেন। অনেকটা নেতৃত্ব শূন্যই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি। এ ছাড়াও বিদ্যমান রয়েছে গ্রুপিং। সব মিলে নাজুক অবস্থা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির। ফলে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে উত্তর জেলা বিএনপি থেকে কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহদাত হোসেন বলেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি যদি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি এর সমুচিত জবাব দেবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি বৃহত্তর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রী জেলে গেলে আমরাও জেলে যাব। আমরা দেশনেত্রীকে ছাড়া বাইরে একজন নেতাকর্মীও থাকব না।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কমিটির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা এসব এখন ঘোষণা করছি না।

দলীয় কোনো প্রস্তুতি মিটিং হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জেলার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে উত্তর জেলা বিএনপির প্রস্তুতি নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ভিপি নাজিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এখন অভিভাবক শূন্য। এরপরও আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর জেলা বিএনপির আওতাধীন সব উপজেলায় নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এসব কর্মসূচি মনিটরিং করবেন উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

তিনি আরো জানান, দেশনেত্রীকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো কিছু হলে চট্টগ্রামবাসী ছাড় দেবে না।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির আগে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, আইন আইনের গতিতে চলবে। আদালতের রায়কে ঘিরে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

তবে এর আগে সিএমপির পক্ষ থেকে কোনো রকম ধরপাকড় করার সিদ্ধান্ত নেই বলে তিনি জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment