২০১৯ সাল থেকে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা’

২০১৯ সাল থেকে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা’

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ২০১৯ সাল থেকে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সচিব মো.সোহরাব হোসাইন। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টে রুল জারির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

শিক্ষা সচিব, ‘পরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তনে আমি নিজে কাজ করছি। একটি উপায় আমরা অবশ্যই বের করবো এবং বিশেষজ্ঞদের এ কাজে সম্পৃক্ত করবো। নতুন পদ্ধতিতে আগামী বছর থেকে পরীক্ষা নেয়া হবে। যে পদ্ধতি নিয়ে জনমনে আর কোনও প্রশ্ন থাকবে না।’

এমসিকিউ পদ্ধতি তুলে দেয়া হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা সচিব বলেন, ‘এমসিকিউর অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তা কতটুকু ভালো উদ্যোগ সে বিষয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। এই পদ্ধতিটি খুবই ঝামেলা করছে। এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমি মনে করি, প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে এমসিকিউ অনেকাংশে দায়ী।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস কোথা থেকে হয় তার মূলে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। তদন্ত সংস্থার সদস্যরা সমস্যার ‍মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা নিশ্চয়ই এর একটা সুরাহা বের করে ফেলবেন।’

সেসব বিষয়ে প্রশ্নফাঁস হয়েছে সেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এখনই বাতিল নয়, যাচাই-বাছাই কমিটি যে প্রতিবেদন দেবে, সেই কমিটির দেয়া প্রতিবেদন পর্যালচনা করতে আরও একটি কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে যে সুপারিশ করবে, সেই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদালতের রুল জারির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আদালতকে ব্যাখ্যা দেয়া হবে। আমরা আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন করবো। এছাড়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের জন্য প্রশ্ন প্রণয়নে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’ প্রশ্নফাঁসের হোতাদের ধরতে এর মূলে পৌঁছানোর জন্য গোয়েন্দা বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মো. সোহরাব হোসাইন।

সোহরাব হোসেন বলেন, ‘২০১৪ সালে একটি কমিটি হয়েছিল প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর কৌশল বের করার জন্য। সেখানে আমি কমিটির প্রধান ছিলাম। খুঁটিনাটি সব বিষয় দেখে আমরা নিজেরাই বলছিলাম বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে এখানে প্রতিটি প্রশ্ন ফাঁস হওয়া স্বাভাবিক।’

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের শিক্ষাসচিব বলেন, ‘আপনারা বলছেন আমাদের নিষ্ক্রয়তা আছে, এটা থাকলে আমরা তা আদালতের কাছে বলব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করতে হবে যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অবকাশ থাকবে না।’ আর তাতে সবাইকে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।

পাবলিক পরীক্ষা যথাযথ পরিচালনা করা এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন শিক্ষাসচিব। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আরও শাখা যুক্ত।

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এ পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে ২৭ থেকে ২৮ হাজার মানুষ সংশ্লিষ্ট। এতগুলো মানুষের মধ্যে একজন লোকও যদি অসৎ হন তাহলে বাকি সব সৎ মানুষের অবদান ভেস্তে যায়।’

তবে প্রশ্ন ফাঁস দ্রুত ছড়াতে ইন্টারনেটকে দায়ী করেন শিক্ষাসচিব। তিনি বলেন, ‘যদি নেট সিস্টেম না থাকত তাহলে যারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের পক্ষে কাজটা এত দ্রুত করা সহজ হতো না। একটি জায়গায় প্রশ্ন ফাঁস হলে তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। নেট না থাকলে এত দ্রুত ছড়িয়ে যেত না। হয়তো কেউ জানতই না।’

নৈতিকতার অবনতিও প্রশ্ন ফাঁস ছড়ানোর পেছনে কাজ করছে বলে মনে করেন সোহরাব হোসেন। ‘আগে মানুষের নৈতিকতা ছিল উন্নত। কোনো স্থানে প্রশ্ন ফাঁস হলেও তা কাউকে বলত না কেউ লজ্জায়। এখন নিজে থেকে অন্যকে প্রশ্ন অনলাইনে পাঠিয়ে দেয়।’ অভিভাবক থেকে শুরু করে সবার মধ্যে এ প্রবণতা চলছে বলে মনে করেন সচিব।

তাদের ধরা হচ্ছে না কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষাসচিব বলেন, ‘আসলে হাতেনাতে ধরা না গেলে কাউকে দোষী বলা যায় না। গোয়েন্দারা চেষ্টা করছে। অচিরেই এর সমাধান হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সবগুলো প্রশ্নই পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ফাঁস হয় এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিলেও ফাঁস বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গত রোববার পরীক্ষার দিন আড়াই ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়ে পরে সোমবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment