সঙ্গীতাঙ্গনের নক্ষত্র তিনি

বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী সুবীরনন্দী। সহজ কথায় এই অঙ্গনের নক্ষত্র তিনি। ৬৫ পেরিয়ে এখনো গান করছেন নিয়মিত। নতুন করে তার গাওয়া ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে কিছুই আমার ভালোলাগেনা’ গানটি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। তাকে নিয়ে বিশেষ এই প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভি মঈনুদ্দিন।
শুধু জন্মদিন এলেই যে সুবীরনন্দী তার প্রিয় প্রিয় স্থানে ঘুরে বেড়ান এমনটি নয়। বছরজুড়েই তিনি তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রিয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করেন। উপলদ্ধি তার এমনটাই যে জীবনতো একটাই, কাজের ফাঁকে ফাঁকে জীবনটাও উপভোগ করতে হবে। রাজধানীতে সুবীরনন্দীর প্রিয় জায়গার মধ্যে রয়েছে- রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ আরও কয়েকটি স্থান।জীবন যাত্রা প্রসঙ্গে সুবীরনন্দী বলেন, ‘দেখতে দেখতে জীবনের কতোটা বছর পেরিয়ে গেলো, ভাবাই যায় না! সুস্থ সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য সবার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি। সেই সঙ্গে নবীন প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, একদিন বা অল্পদিন টিকে থাকার জন্য নয়, আজীবন টিকে থাকার জন্য তোমরা সঙ্গীতচর্চা করবে। এ জন্য একনিষ্ঠ সাধনার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী।’

সুবীরনন্দী আরো বলেন,‘নতুনদের মধ্যে অনেকেই ভালো গান করছে। তারা যেন তাদের এই চেষ্টা এবং অধ্যবসায় নিয়মিত ধরে রাখে এটাই আমার পরামর্শ। কারণ গান অনেক অনেক সাধনার বিষয়।’সম্প্রতি গান বাংলা চ্যানেলে সুবীরনন্দীর গাওয়া ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে’ গানটি নতুন সঙ্গীতায়োজনে শ্রোতা দর্শকের সামনে আবারো তুলে দেয়া হয়েছে। যারাই নতুনভাবে সূবীরনন্দীর কন্ঠে এ গানটি শুনছেন, তারাই নতুন এক সুবীরনন্দীকে আবিষ্কার করছেন। রাজা হোসেন খান ও সুজেয় শ্যামের সঙ্গীত পরিচালনায় আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ ছবিতে ১৯৭৪ সালে সুবীর নন্দী প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সহস্রাধিক ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। পেয়েছেন চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আলমগীর কবির পরিচালিত ‘মহানায়ক’ ছবিতে গান গেয়ে। এরপর তিনি ‘শুভদা’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ‘মেঘের পর মেঘ’ ছবির সুবাদে এ সম্মাননা অর্জন করেন। সেই সঙ্গে ১৯৭৭, ১৯৮৪, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে বাচসাস পুরস্কারও অর্জন করেন।

সুবীর নন্দীর প্রথম একক এ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ১৯৮১ সালে বাজারে আসে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত তার বিশেরও অধিক একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এ মুহুর্তে নিজেকে সবচেয়ে সুখি মনে করেন সুবীর নন্দী। কারণ ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর তিনি নানা হয়েছেন। সূবীর নন্দীর একমাত্র কন্যা ‘মৌ’র ছেলের নাম ‘হৃদ্যিমান’।এদিকে ভালোবাসা দিবসে জামাল হোসেনের কথায় এবং মুহিনের সুর সঙ্গীতে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ অ্যালবাম ‘শ্রাবণ এলে’। এই অ্যালবামে মুহিনের সুর সঙ্গীতে ‘অভিমানী’ শিরোনামের গানে কন্ঠ দিলেন সুবীর নন্দী।

গানটির রেকর্ডিং শেষে সুবীর নন্দী বলেন,‘ জামাল হোসেনের কথা এর আগে আমি শুনেছি। তবে তার লেখা কোন গানে এবারই প্রথম গাইলাম। গানের বাণী বেশ ভালো। আর মুহিন আমার অত্যন্ত ¯স্নেহভাজন একজন শিল্পী। চোখের সামনেই দেখতে দেখতে মুহিন বড় হয়েগেলো। মুহিন যে এতো চমৎকার সুর করে তা আমার জানা ছিলো না। খুব চমৎকার একটি গান হয়েছে। আশাকরি শ্রোতাদেরও ভালোলাগবে।’ ‘অভিমানী’ গানের কথা এমন ‘আমাকেতো জানতে তুমি কেমন ছিলাম এই আমি, তবুও কেন একটু ভুল হলে তুমি অভিমানী।’ সুবীর নন্দী নিজের সুর সঙ্গীতে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করতে যাচ্ছেন।তিনি জানান, একেবারেই নতুন শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়াবেন তিনি। চলতি বছরেই অ্যালবামটি প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে সুবীর নন্দীর।উল্লেখ্য, ‘পাখিরে তুই’ গানটি লিখেছিলেন খান আতাউর রহমান এবং সুর করেছিলেন আমির আলী।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment