ভাষা শহীদদের প্রতি উপকূলের শিশু-কিশোরদের শ্রদ্ধা

ভাষা শহীদদের প্রতি উপকূলের শিশু-কিশোরদের শ্রদ্ধা

অস্থায়ী শহীদ মিনারে বনফুলের মালা দিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে উপকূলীয় গ্রামীণ জনপদের হাজারো শিশু-কিশোর। কলাগাছ, কাঠ-কাপড়, কাঠের গুড়ি এবং রঙ্গিন কাগজের পশরায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে এসব অস্থায়ী শহীদ মিনার। বেদিতে দেয়া হয়েছে রঙ্গিন কাগজের মালা আর নাম না জানা অনেক বনফুল। সূর্যোদয়ের পর শিশু-কিশোররা এসব বনফুল দিয়েই শ্রদ্ধা জানায় শহীদ বেদিতে।
ভাষা শহীদদের প্রতি উপকূলের শিশু-কিশোরদের শ্রদ্ধানির্ঘুম রাত কাটিয়ে ক্লান্ত অবসন্ন এসব শিশু-কিশোরদের মলিন মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় দেখা যায় এসব শহীদ মিনারের স্তম্ভ বুকে রঙ্গিন কালিতে অ, আ, ক, খ বর্ণমালার আঁকা। সাদা কাগজে রঙিন কালির আস্তরণে লেখা রয়েছে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি, আমি ভুলিতে পারি। ২১ আমার অহংকার। কলাপাড়া পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় কয়েকজন শিশু-কিশোরের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকে স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বাঁশ, সুতো, রঙ্গিন কাগজসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে তৈরি করেছে অস্থায়ী শহীদ মিনার। তারা জানায়, পাঠ্য বইয়ে পড়েছি, বড়দের কাছে জেনেছি ভাষা দিবসের কথা। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়ে হয়েছেন শহীদ। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজেদের হাতে শহীদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখনো স্থায়ী শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। উপজেলায় ১৮৭টি সরকারি ও আধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২২টি বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে। শহীদ মিনার বিহীন ওইসব বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করে শিশু-শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল সরকার। উপজেলার আয়ুমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান জানান, কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারাও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ রানা বলেন, স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ, প্রতিদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শিক্ষার্থীদের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনসহ মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষকরা এ ব্যাপারে উদাসীন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment