কুমিল্লায় গ্রাম্য শালিসে অন্তঃসত্ত্বাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

কুমিল্লায় গ্রাম্য শালিসে অন্তঃসত্ত্বাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

মো:ফাহাদ বিন রহমান,কুমিল্লা প্রতিনিধি:-
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ১নং কালির বাজার ইউনিয়নের সৈয়দপুর দঃ পাড়া (দৈয়ারা) গ্রামের দরিদ্র অটো রিক্সা চালক দিদার মিয়ার ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৬) কে গ্রাম্য শালিসে প্রকাশ্যে বাড়ীর উঠানে টেনে হেচড়ে মাটিতে ফেলে মানুষের সামনেই শ্লিলতাহানীসহ মারধর এবং পেটে লাথি দিয়ে রক্তপাত ঘটানোর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার বিবরণে নির্যাতিতার স্বামী দিদার মিয়া (৩২) এবং মাদ্রাসা পড়ুয়া সন্তান মেহেদী হাসান সহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন গত ২১তারিখ দিবাগত রাত্র ৮:০০টায় পরিবারিক বিষয় নিয়ে একটি শালিসে বসেন এলাকার কয়েকজন মাতাব্বর এবং পরিবারের সদস্যরা। এসময় নির্যাতিতার স্বামী দিদার মিয়া কে পাঠানো হয় প্রতিবেশি গ্রামে তার শশুর আব্দুর রাজ্জাক কে ডেকে আনার জন্য। অভিযোগকারী দিদার মিয়া জানায় স্ত্রীকে মারধর করার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ফোন পেয়ে দৌড়ে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে বাড়ির উঠানে অঞ্জান এবং রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ীর উঠানে দেখতে পান।
কুমিল্লায় গ্রাম্য শালিসে অন্তঃসত্ত্বাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতননির্যাতিতার ছেলে প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান (৯) জানায়, তার খালাতো বোন কে নিয়ে একটি ঝামেলায় বাড়িতে বিচার বসে। একপর্যায়ে তার বাবা নানা ও নানি কে আনার জন্য গেলে প্রভাবশালী প্রতিবেশী গ্রাম্য সর্দার হালিম মিয়া (৪৮) এবং তার ছেলে হৃদয় (২২) জমির মিয়ার ছেলে বাবু (২৩) ও শফিক মিয়ার ছেলে আলআমিন (২২) তার মায়ের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলে। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছের লোক হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী হালিম সর্দার টেনেহিচড়ে তার মাকে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি মারধর করে এবং পেটে লাথি মারে। এসময় হালিমের সহযোগী তার ছেলে সহ উল্লেখিতরা ও মারধর করে বলে জানায় সে। নির্যাতিতা ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে আঘাতের কারনে রক্তক্ষরণ শরুহলে তারা ঘাবড়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দিদার মিয়া ও তার শশুর আব্দুর রাজ্জাক সহ স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোস্তফা মিয়াকে সাথে নিয়ে আহত স্ত্রী কে নিয়ে প্রথমে কাবিলা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখান তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে রুগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ কুমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। নির্যাতিতার স্বামী রিক্সা চালক দিদার মিয়া অভিযোগ করে বলেন “আমারা গরিব বলে আমাদের বিচার নাই এ দেশে, এর আগেও বহুবার নির্যাতিত হয়ে বিচার চেয়েও কোন সুবিচার পাই নি। তাদের ক্ষমতা আছে বলে কি গরিবের উপড় জুলুম করবে? থানা পুলিশে অভিযোগ করলে অবস্থা আরে খারাপ হবে বলে হুমকি দিতেছে তাই ভয়ে মামলা মোকদ্দমা করতে পারিছি না। আমার আব্বাকে হুমকি দিয়ে হালিম সর্দার বলছে যদি থানায় কোন অভিযোগ করি তাহলে আরো খারাপ হবে এলাকায় থাকতে দিবে না। আমাদের চেয়ারম্যান হাজী সেকান্দর আলী কে জানিয়েছি ঘটনার পরপর।
তিনি বলেছেন উপযুক্ত বিচার করে দেবেন। আমাকে হালিম সর্দারের ছেলে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে কয়েকবার হুমকি দিয়েছে যদি থানায় যাই তাহলে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবে এলাকায় থাকতে দেবে না। তাই ভয়ে থানায় যেতে পারি না। আমরা গরিব মানুষ কাম করে খাই ওদের সাথে পারবো না। ওরা সমাজের বিচার আচার করে আমাদের মত গরিবের জন্য সুবিচার নাই ” ঘটনার সাথে জড়িত অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায় নি। এ বিষয়ে স্থানীয় কালির বাজার ইউ পি চেয়ারম্যান হাজী সেকান্দর আলী বলেন, পারিবারিক ঘটনা হলেও একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর গায়ে হাত তোলা বিরাট বড় অপরাধ। ঘটনার বিষয়ে তিনি শুনেছেন এবং দোষীদের কঠোর বিচার করা হবে বলেও তিনি জানান। স্থানীয় ইউ পি মেম্বার মোস্তফা মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায় নি। কোতোয়ালি মডেল থানার আওতাধীন ক্যান্টনমেন্ট নাজিরা বাজার ফাঁড়ীর আই সি ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবল জানান এমন কোন অভিযোগ তারা এখনো পায় নি। তবে যদি কেউ অভিযোগ করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment