শিবির সন্দেহে ৯ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করল রাবি ছাত্রলীগ

শিবির সন্দেহে ৯ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করল রাবি ছাত্রলীগ

রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিবির সন্দেহে ৯ শিক্ষার্থীকে ছুরি ও লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তাদেরকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা গেছে। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩১ ও ২৩২ নম্বর কক্ষে নিয়ে তাদেরকে প্রায় দুই ঘণ্টা মারধরের পর পুলিশে দেওয়া হয়। এসময় তারা সাংবাদিককেও লাঞ্ছিত করে। বর্তমানে তারা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আটককৃতরা শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম ,প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ ,শাহরিয়ার তানজিম, আব্দুল কাদের, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইয়াকুব,
শিবির সন্দেহে ৯ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করল রাবি ছাত্রলীগভাষা (সংস্কৃত) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মিজানুর রহমান। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের মো. তুহিন, নগরীর লোকনাথ স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বি এবং রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তন্ময়। এদের মধ্যে তুহিন, কাদের এবং ইয়াকুবের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বসে গল্প করছিল। পরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদেরকে শিবিরকর্মী সন্দেহে জোর করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে নয় শিক্ষার্থীই আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, শহীদ মিনারে ১৬ জন শিবিরকর্মী মিটিং করছে জানতে পেরে আমরা সেখানে যাই। ওই শিক্ষার্থীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় আমরা তাদেরকে হলে নিয়ে আসি। তাদের মধ্যে নয়জনের শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করায় তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করি। বাকি সাতজনের সম্পৃক্ততার কথা সম্পূর্ন অস্বীকার করায় তাদেরকে ছেড়ে দেই। পুলিশে সোপর্দকালে আটককৃত মো. নোমান এবং গোলাম রাব্বি জানান, আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার ব্যাপারে আমরা কথা বলছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা আমাদেরকে জোর করে হলে নিয়ে যায়। পরে তারা আমাদের লোহার পাইপ এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
এসময় হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফ উজ জামানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও সংবাদ সংগ্রহে বাধা প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকজনকে আটক করেছিলো। পরে হলের প্রাধ্যক্ষ ও পুলিশের সহযোগিতায় আমরা তাদেকে উদ্ধার করেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত বলে জানান তিনি। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খান জানান, ‘সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমাদের কাছে ৯ শিক্ষার্থীকে তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। সুস্থ হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment