৭ই মার্চের মিছিলে যৌন হয়রানির ঘটনায় মামলা

৭ই মার্চের মিছিলে যৌন হয়রানির ঘটনায় মামলা

আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে আসা লোকজনের হাতে রাজধানী ঢাকায় একাধিক নারী শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর একদিন পর বৃহস্পতিবার রমনা থানায় মামলা করেছেন এক কলেজছাত্রীর বাবা। তিনি বাংলামোটরে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।

৭ই মার্চের মিছিলে যৌন হয়রানির ঘটনায় মামলা
যৌন হয়রানির ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই তরুণীর বাবা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন রাত ৯টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে জানতে পারেন তার মেয়ে (ভিকটিম) তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেইলি রোড ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় শান্তিনগর মোড়ে বাস না পেয়ে কাকরাইল মোড়ে হেঁটে যায়। সেখানেও সে বাস না পেয়ে অফিসার্স ক্লাবের আগের সিগন্যালে এসে ফার্মগেটগামী একটি বাসে ওঠে। বাসটি মগবাজার হয়ে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার সময় তীব্র যানজটে পড়ে।

 

তখন তার মেয়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে বাংলামোটরের দিকে যেতে লাগলে আনুমানিক আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে ৮৯ নম্বর নিউ ইস্কাটন বাসার সামনের ফুটপাতে সাদা টি-শার্ট পরা আনুমানিক ২৫-৩০ বছর বয়সী অন্তত ১৫ জন ছেলে তাকে ঘিরে ধরে টিজিং করে। তাকে টানাহেঁচড়া করে পরিহিত স্কুল ড্রেসের জামার শোল্ডার ও দুটি বোতাম ছিঁড়ে ফেলে তারা। একজন ট্রাফিক পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দিলে সে বাসায় আসে।

 

এজাহারে ওই বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে এ ব্যাপারে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়। আমরা মেয়ের শ্লীলতাহানী করার কারণে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এজাহার দায়ের করলাম।’ ৭ই মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি মিছিল থেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে- এমন অভিযোগ করে লেখা ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টির নিন্দা আসে।

 

এরপর বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যৌন হয়রানির যে অভিযোগগুলো ফেসবুকে ঘুরছিল এর মধ্যে বাংলামোটরের ঘটনাটিতে মামলা দায়ের কার হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি )কাজী মাইনুল ইসলাম।

 

বাংলামোটরের ঘটনাটি নিয়ে যে স্ট্যাটাসটি দেয়া হয়েছিল সেখানে লেখা ছিল- ‘শান্তিনগর মোড়ে একঘণ্টা দাড়ায় থেকেও কোন বাস পাইলাম না। হেটে গেলাম বাংলামটর। বাংলামটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০ জন আমাকে ঘিরে দাড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার থাকে তাই। কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউ কেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেছে। আমার কলেজ ড্রেসের বোমাত ছিঁড়ে গেছে, ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইসে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই। একটা পুলিশ অফিসার এই মলেস্টিং চক্রে ঢুকে আমাকে বের করে এন্ড একটা বাস থামায়ে বাসে তুলে দেয়। বাকিটা পথ সেইফ্লি আসছি।’

 

ওই নারী শিক্ষার্থীর পোস্ট ফেসবুকে ব্যপকভাবে ভাইরাল হয়। অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিকমাধ্যমে। পরে অবশ্য স্ট্যাটাসটি প্রাইভেসি দিয়ে আরো লিখেছেন, ‘ভালো আছি, সুস্থ আছি। পোস্টটা অনলি মি করেছি, কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দেইনি। প্লাস আমার কলেজকে জড়ানো হচ্ছিল এ ব্যাপারে। ব্যাপারটার সাথে আমার কলেজের কোনো সম্পর্ক নাই।’

 

এদিকে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর জবানবন্দী নিয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মেয়েটির পোস্ট ভুয়া নয়। তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তার দেয়া বর্ণনা ও ঘটনার সময় অনুযায়ী শাহবাগ, শান্তিনগর, বাংলামটরসহ এর আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ঊর্ধ্বতনরা। তদন্ত চলছে।’

 

তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে একাধিক স্পটে যৌন হয়রানি-সংক্রান্ত পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেসব তরুণীরাও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। প্রযুক্তিগত তদন্তের পর আমরা ধারণা করছি, সরকারকে বিব্রত করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। কারণ বাংলামোটরের ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো একাউন্টের অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায়নি।

 

অভিযোগ ওঠার পর প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস-সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অনুষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কিংবা গল্পের কথা শোনা যাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা কতটুকু জানি না। হয়ত শিগগিরই তা উদঘাটিত হবে।

 

উল্লিখিত ঘটনার আশপাশে সবখানেই সিসি-ক্যামেরা আছে। ঘটনা ঘটলে কারা কারা দায়ী এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী তা খুঁজে বের করা কঠিন কিছু হবে না। না ঘটলেও হয়ত রটনার রহস্য উদঘাটিত হবে। উত্তেজিত হয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে অপেক্ষা করাই ভালো।’

 

এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ স্থলের বাইরে যদি কোনো যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে কেউ ছাড় পাবে না। এটা আমাদের দলের বিষয় নয় তবে সরকারের দায় আছে। সমাবেশের বাইরে ঢাকার রাস্তায় কোথায় কি হয়েছে এটা আমাদের দলের বিষয় নয়। তবে অবশ্যই সরকারের দায় আছে। কোথাও যদি কিছু ঘটে থাকে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন খতিয়ে দেখছেন। এই সরকারের আমলে এ ধরনের ঘটনায় কেউ ছাড় পায়নি এবং গতকাল যদি ঘটে থাকে কেউ ছাড় পাবে না।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment