বাদাম আর শরবত বিক্রিতে চলে নবম শ্রেনীর ছাত্র কিশোর সোহেলের সংসারসহ লেখাপড়ার খরচ

বাদাম আর শরবত বিক্রিতে চলে নবম শ্রেনীর ছাত্র কিশোর সোহেলের সংসারসহ লেখাপড়ার খরচ
মো.মোয়াজ্জেম হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ-
সকালে শরবত আর বিকালে চলে বাদাম বিক্রি। রাতে চলে লেখাপাড়া। আর এ শরবত ও বাদাম বিক্রিতে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই চলে কিশোর সোহেলের মা-বাবার সংসারসহ লেখাপড়ার খরচ।
বরগুনা জেলার গরিচন্ডা ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা। বয়স ১৫ কি ১৬ হবে। মা-বাবা, ছোট বোন আর তাকে নিয়ে চার জনের সংসার সোহেলের। পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত সোহেল ঠিক ভাবেই লেখাপড়া করে আসছিল। কিন্তু স্বপ্ন যেন বাস্তবতার কাছে হার মেনে যায়।

সংসারের আর্থিত টানপোড়নে ছেড়ে দিতে হয় লেখাপড়া। বাবা বয়োবৃদ্ধ আর বড় দুই ভাই বিয়ে করে পরিবাবার নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ায় মাত্র দশ বছর থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। সংসারের ভরপোষনের জন্য শুরু করেন বাদাম বিক্রি। কিন্তু বছর দুই না যেতেই আবার দানা বেধে ওঠে সোহেলর লেখাপড়ার স্বপ্ন। বন্ধু বান্ধব ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরনায় পুনরায় ভর্তি হন সপ্তম শ্রেনীতে।

গত বছর বরগুনার উত্তর লাকুরতলা এম এ দাখিল মাদ্রাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে এবছর নবম শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছেন। এতদিন বরগুনা শহরে বাদাম বিক্রি করে লেখাপড়াসহ সংসার চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে সোহেল কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে সকালে শরবত আর বিকালে বাদাম বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর অবধি ভ্যানে করে বিক্রি করেন শরবত।

আর বিকাল ০৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে বাদাম বিক্রি । তারপর রাতে চলে লেখাপড়া। একমাসের জন্য কলাপাড়ায় এসেছেন সোহেল। একমাস পর বাড়িতে চলে যাবেন ক্লাস করার জন্য। কিছুদিন ক্লাস করে আবার ফিরে আসবেন উপার্জনের জন্য। এভাবে পাঁচ বছর যাবৎ বাদাম আর শরবত বিক্রি করে চলছে সোহেলের সংসার। চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের লেখাপড়া।

কিশোর সোহেল জানান, শরবত ও বাদাম বিক্রি করে সংসারের ভর পোষনসহ নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন লেখাপড়া করে ভাল একটি সরকারী চাকরি করব।
কিশোর সোহেলের ভগ্নিপতি মো. ইউনুচ জানান, সোহেলের লেখাপড়া করার খুবই আগ্রহ। আমি সবসময় ওর খোজ খবর রাখছি এবং লেখাপড়ার জন্য অনুপ্রেরনা দিচ্ছি।
উত্তর লাকুরতলা এম এ দাখিল মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক মো. আবদুল আলীম জানান, এসব ঝড়ে পড়া অবহেলিত গরীব শিক্ষার্থীরা সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যাতে নিজের পায়ে দাড়াতে পাড়ে এটাই আমাদের প্রচেষ্টা। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হতে পারলে দেশে শিক্ষার হার অনেকটা বাড়বে।
##

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment