রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে পুলিশ কখনোই বাঁধা দেয়না-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:-

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, আমরা জেলখানাকে আর কারাগার বলতে চাইনা, কারাগার হবে ‘সংশোধনাগার’। বর্তমানে দেশের সংশোধনাগারে যিনি যে কাজ পারেন তাই করছেন এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের ৫০% তিনি সাজা শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যেতে পারছেন। তিনি আরো বলেন, বন্দিদের জন্য আমরা সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্বের বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শন করে আমরা বন্দিদের সার্বিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করছি।
‘স্বজনের সাথে সংশোধনের পথে’ স্লোগানকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল কারাগারে দেশের প্রথম কারা ফোন বুথের উদ্বোধন কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি এসব কথা বলেন। ২৮ মার্চ বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রিজন লিঙ্ক – স্মার্ট কমিউনিকেশন সিস্টেম ফর ইনমেটস অ্যান্ড রিলেটিভস’। তবে প্রকল্পটি ‘স্বজন’ নামেই পরিচিত।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে মোবাইল ফোন সেবা ‘স্বজন’ উদ্বোধন করে কারাগার চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, বাড়ির আপনজনরা কারাবন্দিদের সাথে দেখা করা ও কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন কথা না হলে কয়েদিদের মনে একাকিত্ব ভর করে, তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘স্বজন’ চালু করা হলো। জেলাখানার বন্দীরা এই দিনের অপেক্ষায় ছিল।

টাঙ্গাইল কারাগারে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ কয়েদি-হাজতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তির ভিত্তিতে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কার্যক্রম প্রথম শুরু করা হলো। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের কারাগারগুলোতে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলাসহ সকল মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে পুলিশ কখনোই বাধা দেয়না। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতান্ত্রিক চর্চায় পুলিশের বাধা দেয়ার কোন সুযোগ নেই।

স্বজন থেকে সুবিধা পাবে কি ভাবে?
টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে এই সেবার জন্য অভ্যন্তরে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চার বন্দি।

সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড ও বাংলাদেশ জেলের সহায়তায় এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এই কার্যক্রমের আওতায় বন্দীরা (হাজতি ও কয়েদি) কারাগারে আসার পর তাঁদের কাছ থেকে স্বজনদের দুটি মুঠোফোন নম্বর রাখা হবে। একজন বন্দী মাসে দু-বার ১০ মিনিট করে কথা বলার সুযোগ পাবেন। কথা বলার ক্ষেত্রে নারী, বৃদ্ধ ও বন্দীদের সঙ্গে আসা শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল কারাগার গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের ভেতর একটি কক্ষে চারটি ফোন বুথ তৈরি করা হয়েছে। জেলার আবুল বাশার জানান, কোনো বন্দী সরাসরি বুথে গিয়ে কথা বলতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়ে বন্দীরা বুথে ঢুকে এক বা দুই চাপলে সফটওয়্যার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট নম্বরে সংযোগ পাওয়া যাবে। নির্ধারিত সময় ১০ মিনিট পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল কেটে যাবে। সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে সতর্কসূচক ‘বিপ’ হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কল ডায়াল হবে না। শুধু নির্ধারিত সময়েই কল করতে হবে। বন্দীদের স্বজনেরা নির্ধারিত সময়ে যাতে কথা বলার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন, সে জন্য আগের দিন তাদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে সময় জানিয়ে দেওয়া হবে।

এটুআই প্রকল্পের পরামর্শক তানভীর কাদেরের নেতৃত্বে কারাগারে ফোন বুথ ও এর সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উদ্বোধনের পর একজন বন্দী তাঁর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার মধ্য দিয়েই এ কার্যক্রম শুরু হবে। তানভীর কাদের বলেন, কারাগারের যেসব কর্মী এই কার্যক্রমে যুক্ত থাকবেন, তাদের পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইলের জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন বলেন, বন্দীরা কারাগার থেকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে পারলে তাদের পারিবারিক সঙ্গে যোগাযোগ অক্ষুন্ন থাকবে।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, বন্দীদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্য এবং অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলায় অভিযুক্ত বন্দীরা ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন না। নিরাপত্তার স্বার্থে বন্দীদের কথোপকথনের সিডিআর (কল ডাটা রেকর্ড) থাকবে। এ ছাড়া কারারক্ষী দ্বারা বুথের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment