গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রতিষ্ঠাতা মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রতিষ্ঠাতা মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান

স্টাফ রিপোর্টার:-
গাজীপুর সিটিকর্পোরেশনে প্রতিষ্ঠাতা মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান জেলা সদরের দক্ষিণ সালনায় ১৯৫০ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মৃত কছিম উদ্দিন আকন্দ। বাড়ির পাশের সালনা প্রাইমারি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন জয়দেবপুর রানী বিলাসমণি স্কুলে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পড়েন ময়মনসিংহ মুসলিম হাই স্কুলে। নবম ও দশম শ্রেণি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে পড়ে এসএসসি পাস করেন। কলেজ জীবনের এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে। লেখাপড়ার খরচ মেটাতে কৃষক পিতার কাছ থেকে টাকা নিতেন, পাশাপাশি নিজেও ছাত্রাবস্থায় টিউশনিও করেছেন। এভাবেই ময়মনসিংহের শিক্ষাজীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়নে এমএসসিতে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে টঙ্গী কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে এম.এ মান্নানের কর্মজীবন শুরু। তখন থেকেই শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। টঙ্গী কলেজ ছেড়ে পরে তিনি গাজীপুর কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে যোগদান করেন।
রাজনীতি : এম.এ মান্নান জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে (জাগদল) যোগ দেন ১৯৭৮ সালে। যা পরে বিএনপিতে পরিণত হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দলের সদস্য থেকে শুরু করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এবং বর্তমানে বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মান্নানের রাজনৈতিক উত্থান শুরু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে। অবশ্য এর আগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে দলীয়ভাবে সালনা গ্রাম সরকার প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। পরে জাতীয় গ্রাম সরকারের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিবেরও দায়িত্বে ছিলেন। অধ্যাপক মান্নান প্রথম ’৮৪ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউলতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে আরও দু’বার তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর আরও দু’বার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করে বিজয়ী হন।
তিনি ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর ও টঙ্গী) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে এম.এ মান্নান বিএনপি সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। কিছুদিন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
অধ্যাপক এম এ মান্নান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাগদল থেকে রাজনীতি শুরু করেন তিনি। চল্লিশ বছর রাজনিতি করে এখন বিএনপি ভাইস- চেয়ারম্যান। ১৯৮০সালের দিকে গ্রাম সরকারের প্রধান হন। ১৯৮৪ সাল থেকে স্থানীয় কাউলতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হয়ে প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা মেয়র গাজীপুর সিটি করর্পোরেশন।
রাজনীতিতে আসার পর বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে তাকে। রাজনীতিতে তার দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অনেক শক্ত। অন্য দলের প্রতিপক্ষ তো আছেই। বিএনপির ঘরেও তার সঙ্গে শত্রুতার শেষ নেই। বিভিন্ন কারনে জেলার রাজনীতিতে মান্নানের অবস্থা যখন বেহাল, তার অনুসারীদের অনেকে দলের মধ্যে কোণঠাসা অবস্থায় ছিল। এমন সময়ে সুবাতাস বইতে শুরু করল। তার কিছু দিন পরেই এলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সংসদ নির্বাচনের ভাবনা, আর দলেরও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সব কোন্দল, ভেদাভেদ ভুলে বিএনপি সবাই একাট্টা হয়ে মেয়র নির্বাচিত করে আনেন তাকে।
উন্নয়নকাজ : প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে তিনি গাজীপুর মহিলা কলেজ, কোনাবাড়ি কলেজ, পুবাইল আদর্শ কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দিরসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও উন্নয়ণে অবদান রেখেছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বছর নগরের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মহাপরিকল্পনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল কিছুদিন পরই ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় চরমভাবে বিঘœ ঘটে। একপর্যায়ে ষড়যন্ত্র করে ৩০টি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে তাকে প্রায় তিনবছর কারাবাস ও জনবিচ্ছিন্ন করে রাখে। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা করা হলেও সব মামলায় তিনি জামিন লাভ করেন। এদিকে নানা ষড়যন্ত্র করে তাকে প্রায় তিন বছর মেয়রের পদ থেকে বাইরে রাখায় সিটিবাসীর আশার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। ইতিমধ্যে তিনি মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। নগরবাসীর কাছ থেকে তাকে দুরে সরিয়ে রাখার জন্য সেটাও ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে মেয়র মান্নান মন্তব্য করেন।
গত মেয়র নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে অধ্যাপক এম এ মান্নানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে দেখে তার প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে ‘এনবিআর-এ করখেলাপের অভিযোগ আনে। একপর্যায়ে তার অ্যাকাউন্ট জব্দ করে। সেটি পরে মিথ্যা প্রমানিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারপরও তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিপক্ষরা যতই ষড়যন্ত্র করছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনগনের আস্থা মান্নানে প্রতি ততই বাড়ছিল।
একাধিকবার বরখাস্ত : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নানকে তিন বার বরখাস্ত করা হয়।২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম দফায় বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে ১৮ এপ্রিল তাকে দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৮ মাস পর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১১ কার্য দিবসের মাথায় তৃতীয় দফায় আবারো বরখাস্ত হন।
উল্লেখ্য: ২০১৩ সালের ৬ জুলাই নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই র্বিাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন এম এ মান্নান। সেই নির্বাচনে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। নবগঠিত এই প্রথম পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। এই পরিষদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টম্বর। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিন বা ৬ মাসের মধ্যে পরবর্তী সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই হিসেবে এমাসেই (মার্চ) মাসে তফসিল ঘোষণার হবে। একের পর এক মামলা, জেল ও দফায় দফায় বরখাস্তের কারণে পূর্ণ মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম. এ মান্নান বলেন, নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এলাকার জনগণ আমাকে অনেক আশা করে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। নানামুখি ষড়যন্ত্র করে আমাকে সিটিবাসীর সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এতে আমি তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। একের পর এক মামলা মোকদ্দমা দিয়ে এবং হাজতে রেখে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ও তার সহযোগিরা কৌশলে জনগণের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছে। আমাকে হাজতে পাঠানোর আগে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ফান্ডে প্রায় ৫০ কোটি টাকা রেখে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন হাজতবাস ও মেয়রের দায়িত্ব থেকে বাইরে থাকার পর আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়ার পর খোঁজ নিয়ে দেখি সিটি করপোরেশনের সকল ফান্ড খালি।

###
তারিখ-৩০-০৩-১৮ ইং

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment