চলন্ত অবস্থায় যা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে

চলন্ত অবস্থায় যা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে

যুক্তরাষ্ট্রের মাঝ-আকাশে একটি বিমানের ইঞ্জিন থেকে ছুটে আসা ধারালো টুকরার আঘাতে জানালা ভেঙে যাওয়ার পর সেটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন পাইলট। এ ঘটনার পর প্রশংসিত হচ্ছেন বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন টেমি জো শাল্টস।

এমন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে বিমানকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে জরুরি অবতরণ করানোর পর যাত্রীরা তাকে ‘হিরো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

গত মঙ্গলবার সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ মডেলের একটি বিমান ১৪৯ জন যাত্রী নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ডালাসে যাচ্ছিল। উড্ডয়ন শুরু করার ২০ মিনিট পর বিমানের ইঞ্জিনে বিকট একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। তখন ইঞ্জিন থেকে একটি টুকরো ছিটকে এসে আঘাত করে বিমানের জানলায়। এতে বিমানের জানলা ভেঙে যায়।

জানলাটি ভেঙে যাওয়ার পর বিমানের ভেতরে বাতাসের চাপ কমে যায় এবং বিমানের ভেতরে যাত্রীরা মুখে অক্সিজেনের মাস্ক পরে চিৎকার করতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে এক নারী যাত্রী বাতাসের টানে ওই জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছিলেন। সেসময় অন্যান্য যাত্রীরা তাকে পেছন থেকে বিমানের ভেতরের দিকে টেনে ধরে রাখেন। কিন্তু পরে জেনিফার রিওর্ডান নামে ৪৩ বছর বয়সী ওই যাত্রী মারা যান। এসময় আরও সাতজন যাত্রী সামান্য আহত হয়েছেন।

পাইলটকে তখন বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

পাইলট: ‘সাউথওয়েস্ট ১৩৮০, আমাদের এখন একটি ইঞ্জিন কাজ করছে। বিমানের একটি অংশ নেই। ফলে আমাদেরকে বিমানের গতি শ্লথ করতে হচ্ছে। কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।’

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: ‘যাত্রীরা আহত হয়েছেন। ওকে। কিন্তু আপনার বিমানে কি আগুন লেগেছে?’

পাইলট: ‘না, আগুন লাগেনি। কিন্তু এর একটা অংশ মিসিং। বলা হচ্ছে, সেখানে একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ একজন বাইরে চলে যাচ্ছেন।’

এরপরই বিমান নামতে শুরু করলে যাত্রীরা ভয় পেয়ে যায়। এবং চিৎকার করতে থাকে। সেসময় যাত্রীদের উদ্দেশ্যে পাইলট বলেন, ‘আমরা নিচে নামছি, পড়ে যাচ্ছি না। সবাই শান্ত হোন। অক্সিজেন মাস্ক পরুন। সবাই সামনের দিকে ঝুঁকে থাকুন, আমরা নিচের দিকে যাচ্ছি। অবতরণের সময়টা কঠিন হবে।’

এরপর ফিলাডেলফিয়া বিমানবন্দরে নিরাপদে বিমান অবতরণ করান পাইলট।

ইঞ্জিন হারিয়ে উড়োজাহাজটিতে যখন আগুন লাগার উপক্রম, তখন আরোহীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন ট্যামি। বিমানটির ৫৫ বচর বয়সী যাত্রী আলফ্রেড টামিলসন নিউ ইয়র্ক পোস্টকে জানিয়েছেন, ‘তার (পাইলটের) স্নায়ু ইস্পাতের মতো শক্ত।’

এই ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, ইঞ্জিনের ফ্যানের ব্লেডে ত্রুটি ছিল বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে ইঞ্জিনে ফ্যানের একটি ব্লেড ভেঙে গেছে। ইঞ্জিনের কোনো অংশ যাতে বেরিয়ে আসতে না পারে সেজন্যে এটি ঢাকনা থাকলেও সেখান থেকে লোহার একটি টুকরো বাইরে চলে আসে এবং সেটি উড়ে আঘাত করে বিমানের একটি জানলায়।

এই ঘটনার ব্যাপারে পাইলট ক্যাপ্টেন শাল্টস সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সব জেট বিমানের ইঞ্জিন পরীক্ষা করে দেখার আদেশ দিতে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, CFM56-7B এই ইঞ্জিনটি বিশ্বজুড়ে আট হাজারেরও বেশি বোয়িং ৭৩৭ বিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও যেসব এয়ারলাইন্সের বিমানে এই ইঞ্জিনটি আছে- ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, আমেরিকান এয়ারলাইন্স এবং ডেল্টা এয়ারলাইন্স- তারা বলছে যে তারাও এসব পরীক্ষা করে দেখার কাজ শুরু করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়ে তিনি কৃষি-ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তারপর তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। মার্কিন নৌবাহিনীতেও তিনি ১০ বছর চাকরি করেছেন। তারপর তিনি সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে যোগ দান করেন। তার স্বামীও এই একই এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে। -বিবিসি

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment