কোটা আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রী ফিরলে প্রজ্ঞাপনের আশ্বাস

কোটা আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রী ফিরলে প্রজ্ঞাপনের আশ্বাস

সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে যে কথা বলেছেন, তার আলোকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন হবে বলে কোটা আন্দোলনের নেতাদেরকে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরলেই এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে।

এপ্রিলের মধ্যে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে ছাত্রদের পক্ষ থেকে আবার আন্দোলনের হুমকি আসার পরদিন শুক্রবার রাতে তাদের সঙ্গে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ন্যাম ভবনের বাসভবনে বসেন নানক। এ সময় এই আশ্বাস দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী নেতারা। পরে নানকও এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কারে আন্দোলনের মুখে গত ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ‘কোনো কোটা থাকার দরকার নেই’ বলে বক্তব্য রাখেন। এতে ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যায়।

তবে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দেয়া বক্তব্যে তার নিজের মতের কথা জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন, তাদের সুপারিশের আলোকেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রধানমন্ত্রী সেদিন কেবল বিসিএস চাকরির উদাহরণ দিয়েছেন। ফলে কোটার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কেবল বিসিএস চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে নাকি, সামগ্রিক সরকার চাকরিতে প্রযোজ্য হবে, সেটি স্পষ্ট হবে প্রজ্ঞাপনের পর।

২৬ এপ্রিল কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ চলতি মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন না হলে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। সেদিনই ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নানকের পক্ষ থেকে।

শুক্রবার রাত নয়টার কিছু পর ছাত্রদের ১৫ জন নেতা নানকের ন্যাম ভবনে প্রবেশ করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে আসেন নানক। এর আগে ছাত্রদেরকে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক শামীম।

ক্ষমতাসী দলের দুই নেতার সঙ্গে ছাত্রদের বৈঠক চলে প্রায় ১১টা অবধি। বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক

নুরুল হক নূর বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে। নেতাদের কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তারা বলেছেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দেশে আসলে প্রজ্ঞাপন হবে আশা করি।’

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়া সফরে রয়েছেন। তার সেখান থেকে ৩০ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এই বৈঠকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি ছাড়াও গত ৮ এপ্রিল পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা প্রত্যাহার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বরখাস্ত করাসহ নানা বিষয়ে কথা হয়।

কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর বলেন, ‘নেতারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। কোনো মামলায় নিরপরাধ ছাত্রদেরকে পুলিশ হয়রানি করবে না। মামলাগুলো তুলে নেয়ার জন্য নেতারা পুলিশের সাথে কথা বলবেন।’

‘তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে যে হামলা হয়েছে, তাতে আমরা সাধারণ ছাত্ররা জড়িত না। এখানে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণসহ পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’

প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদকে চাকরি থেকে অপসারণ নিয়েও কথা হয় বৈঠকে। তিনি কোটা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন এবং আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, তাকে এই কারণে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।

নুরুল ইসলাম নূর বলেন, ‘তিনি ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পক্ষে কথা বলেছেন, এটা তো কোনো অপরাধ না।’

এ বিষয়ে নানক কী বলেছেন- এমন প্রশ্নে নূর বলেন, ‘আমরা কথা বলেছি, তারা আশ্বস্ত করেছি, তারা এই বিষয়টিও দেখবেন।’

আন্দোলনকারী সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলেন, ‘সরকারকে ৭ তারিখ পর্যন্ত যে আল্টিমেটাম দেয়া আছে, সেটা বহাল থাকবে। এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হলে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

রাশেদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। এটা সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। এই আন্দোলনে ছাত্রলীগও আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছে প্রথমে। তাই এখানে যেন কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমরা সতর্ক থাকব।’

পরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন, তাই সেটা বাতিল হবে। যেহেতু এটা প্রক্রিয়ার বিষয়, তাই প্রধানমন্ত্রী দেশে আসলে পরিপত্র জারি হবে।’

‘সাধারণ ছাত্ররা যেভাবে চেয়েছে, আমরাও চাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পরিপত্র জারি হোক।’

ছাত্ররা যে আবারও কর্মসূচি পালনের হুমকি দিচ্ছে-এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নানক বলেন, ‘ছাত্ররা দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করতেই পারে। আমরাও ছাত্র ছিলাম। আমরাও একইভাবে দাবি করে গেছি নানা বিষয়ে।’

গত ৮ এপ্রিল সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার বিষয়ে কী কথা হয়েছে, জানতে চাইলে নানক বলেন, ‘আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে, যারা আন্দোলন করেছেন তাদের নেতাদেরকে হয়রানি করা হবে না। পর্যায়ক্রমে মামলাগুলো তুলে নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলব।’

‘নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’

‘ভিসির বাড়িতে যে হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে নানা কর্মসূচির মধ্যে গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এরপর সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে যায়। আর তাদের কর্মসূচির মুখে ১২ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংস্কার করতে গেলে আবারও সংস্কারের দাবি উঠবে। তার চেয়ে কোনো কোটার দরকার নেই।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরুর দিকে আন্দোলন হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ নিয়ে। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা ১৯৯৭ সালে প্রথমে এই দাবিতে মাঠে নামে। এরপর নানা সময় তারা ব্যর্থ হয়েছে।

তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন সফল না হলেও এবার আন্দোলন শুরু হয় কোটা সংস্কারের কথা বলে। তার তারা কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে সব কোটা মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলে। আর এই দাবি ব্যাপকভাবে ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment