পাসে এগিয়ে মেয়ে, জিপিএ ফাইভে ছেলে

পাসে এগিয়ে মেয়ে, জিপিএ ফাইভে ছেলে

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারের দিক দিয়ে ছেলেদেরকে ছাড়িয়ে গেছে মেয়েরা। তবে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ অর্থাৎ পাঁচ পয়েন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে আবার এগিয়ে গেছে ছেলেরা।

রবিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফল তুলে দেয়ার পর দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় তিনি ফলাফলের সার্বিক দিক তুলে ধরেন।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারাদেশে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সেটি সকালেই জানা গেছে। পাসের হার দুই শতাংশেরও বেশি কমলেও সর্বোচ্চ জিপিএ বাড়ার তথ্যও গণভবনের অনুষ্ঠানের সুবাদে প্রকাশ হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, সব বোর্ড মিলিয়ে ছাত্রীরা পাসের হারের দিকে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ এগিয়ে। এবার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে আর ছাত্রীরা পাস করেছে ৭৬ দশমিক  ৭১ শতাংশ।

তবে পূর্ণাঙ্গ জিপিএর দিক থেকে এগিয়ে ছেলেরা। এবার মেয়েদের মধ্যে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৫৪ হাজার ৯২৮ জন। আর ছেলেরা পেয়েছে ৫৫ হাজার ৭০১ জন।

গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে দুই শতাংশের বেশি। তবে জিপিএ ফাইভ বেড়েছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ফলের খাতায় এবার কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমভাবে মূল্যায়ন করা হয়, এ জন্য আমরা খাতা পুনঃমূল্যায়নের ব্যবস্থা রেখেছি। এর ফলাফল পরীক্ষার মোট ফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।’

‘শিক্ষার পরিবেশ মানসম্মত তৈরি করার চেষ্টা চলছে। মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’

এবার আটটি সাধারণ বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে মাদ্রাসায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হওয়াতেই সামগ্রিকভাবে ফল খারাপ হয়েছে।

বিভাগওয়ারী ছাত্র-ছাত্রীদের পাসের হার কেমন

এবার ১০ বোর্ডের মধ্যে আটটি সাধারণ বোর্ডে মাধ্যমিকে পাসের হারের দিকে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ।

সারা দেশে সব মিলিয়ে ছাত্রীরা বেশি পাস করলেও রাজশাহীতে ছেলেদের তুলনায় কম পাস করেছে। সেখানে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ০৮ শতাংশ। সেখানে ছাত্রদের ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এখানে ছাত্রদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৭৯ এবং ছাত্রীদের ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

তৃতীয় কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এখানেও ছাত্ররা তুলনামূলক বেশি পাস করেছে। এই বোর্ডের ছাত্রদের ৮১ দশমিক ২৯ শতাংশ পাস করলেও ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এই হার ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

দিনাজপুর বোর্ডে সামগ্রিকভাবে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। এখানে ছাত্রদের ৭৫ দশমিক ৮১ ও ছাত্রীদের ৭৯ দশমিক ৫১ শতাংশ পাস করেছে।

বরিশাল বোর্ডে পাসে হার ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এখানে ছাত্রদের ৭৫ দশমিক ২৩ এবং ছাত্রীদের ৭৯ দশমিক ০২ শতাংশ পাস করেছে।

যশোর বোর্ডে সামগ্রিক ভাবে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬৪। এখানে ছাত্রদের পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৪ হলেও ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এই হার ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বোর্ডে সামগ্রিকভাগে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫০ শতাং। এখানেও ছাতদের পাসের হার সামান্য বেশি। ছাত্রদের ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশের বিপরীতে ছাত্রীদের ৭৫ দশমিক ১৯ শতাংশ পাস করেছে।

সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এখানে ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৩৩ আর ছাত্রীদের ৬৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে সামগ্রিকভাবে পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের ৭১ দশমিক ১২ আর মেয়েদের ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

কারিগরি বোর্ডে সামগ্রিকভাবে পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, তার মেয়েদের ৭৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগে বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার অনেক কম ছিল। আমরা এসব বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা ও অতিরিক্ত ক্লাসসহ নানা প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে ফল ভালো করতে সক্ষম হয়েছি।’

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment