মহাদেবপুরে মাদুর বুনে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে শতাধিক গৃহবধু

 

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ : দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে গীতা রাণীর সংসার। স্বামী রতন কৃষি কাজের সাথে
জড়িত। স্বামীর একার আয়ে অভাব দূর হয়না সংসারের, সারা বছরই চলে আর্থিক টানাপোড়েন। এ টানাপোড়েন
থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকেন গীতা রাণী। এক সময় পেয়ে যান সে পথের সন্ধান। প্রতিবেশি এক ভাবীর কাছ
থেকে শিখে নেন মাদুর বুনা। মাদুর বুনেই বাড়তি আয়ের মাধ্যমে অভাবী সংসারে স্বচ্ছলতা আনেন গীতা রাণী।
গীতা রাণী জানান, আগে অভাবের কারণে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হত। মাদুর বুনা
শুরু করার পর স্বামীর আয়ের পাশাপাশি মাদুর বুনা আয়ে স্বচ্ছল ভাবেই চলছে সংসার। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার
চেরাগপুর ইউনিয়নের ধনজইল গ্রামের গৃহবধু গীতা রাণী এভাবেই শোনালেন তার সংসারে স্বচ্ছলতা আসার গল্প।
শুধু গীতা রাণীই নয়- এ গ্রামের ধ্রুপদী, সেতুরাণী, কল্যাণী সহ শতাধিক গৃহবধু মাদুর বুনে সংসারে
এনেছেন স্বচ্ছলতা। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপশি মাদুর বুনে বাড়তি আয় করায় সংসারে এসব গৃহবধুর
গুরুত্ব ও মর্যাদা বেড়েছে। ধনজইল গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের উত্তর পার্শে বসবাসকারী গৃহবধুরা মাদুর বুনায়
ব্যস্ত। এ গ্রামের শতাধিক গৃহবধু মাদুর বুনার সাথে জড়িত বলে জানালেন এ গ্রামের বৃদ্ধ কুড়ানি দেবনাথ। এসব
পরিবারের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু পরিবার। কয়েকটি মুসলমান পরিবারও রয়েছে এখানে। তারাও মাদুর বুনার সাথে
জড়িত হয়ে পড়েছে। এখানকার কারো কারো মূল পেশাই মাদুর তৈরি ও বিক্রি করা। আবার কেউ কেউ সংসারের বাড়তি
আয়ের জন্য মাদুর বুনছেন। মাদুর তৈরির সাথে জড়িত রাধা রাণী জানান, তাদের নিজের তেমন জমি নেই। মাদুর তৈরি
ও বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। আগে লাভ বেশি হত এখন মাদুর তৈরির পাতি ও দরির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।
মাদুর ব্যবসার সাথে জড়িত মিঠু দেবনাথ জানান, আগে রানীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী থেকে পাতি এনে মাদুর
বুনতে হত। এখন স্থানীয়ভাবে স্বল্প পরিসরে পাতির চাষ শুরু হয়েছে। একটি মাদুর তৈরিতে পাতি বাবদ ৩০ টাকা ও দরি
বাবদ ২০ টাকা খরচ হিসাবে একটি মাদুর তৈরিতে ৫০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ১০০-১২০ টাকায়। এতে একটি
মাদুর তৈরি করে ৫০-৭০ টাকা লাভ পাওয়া যায়। একজন নারী কারিগর দিনে তিন’টি থেকে চার’টি মাদুর তৈরি করতে
পারেন। এখানকার তৈরি মাদুর পেতে বসে হয়ত যখন কোন পরিবার খোশ গল্পে মেতে ওঠে তখনও এতটুকু ফুসরত নেই
মাদুর পল্লীর গৃহবধুদের। বাড়তি আয়ের নেশায় বুনতে থাকেন একের পর এক মাদুর।

বিকাশ চন্দ্র প্রাং
নওগাঁ

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment