অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ, শরণখোলায় আমনের বীজ সঙ্কট

আবু হানিফ, বাগেরহাট থেকে :

বাগেরহাটের শরণখোলায় চলতি আমন মৌসুমে সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত (বিএডিসি’র) উচ্চফলনশীল বীজ ধান বিক্রিতে চাষীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতানোর অভিযোগ উঠেছে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করায় বীজ ধান নিয়ে কৃষকদের মাঝে একপ্রকার কাড়াকাড়ি চলছে। আবার অতিরিক্ত মূল্য দিয়েও কোথাও কোথাও চাহিদা মতো বীজ কিনতে পাড়ছেনা চাষীরা। তবে, বীজ ধান নিয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা থাকলেও কৃষি বিভাগের দাবী আমন চাষ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ৯ হাজার ২’শ ৫০ হেক্টর  জমিতে প্রায় ১১ হাজার চাষী আমন চাষাবাদ করার কথা রয়েছে। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বি আর-১১, ৫২ ও ৪৯, ভিত্তি ও প্রত্যয় মান ঘোষিত তিন জাতের বীজ ধান সরকার নির্ধারিত মূল্যে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় উপজেলার চার ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ ধান সরবরাহের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে রায়েন্দা মেসার্স সরোয়ার এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শহিদুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রাসেল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স স্বপন নাগ এন্টারপ্রাইজ সহ চার ব্যবসায়ীকে ডিলার হিসাবে নিয়োগ দেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ডিলার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বীজ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা মুনাফা হাতাচ্ছেন। এছাড়া, বীজ ক্রয় কালে কৃষকদের রসিদ প্রদান করার নিয়ম থাকলেও তা দেয়া হচ্ছেনা। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না কেউ। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ডিলার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার ব্যবস্থার তেমন কোন মনিটরিং না থাকায় হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা কৃষকরা। উপজেলার মঠেরপাড়, সাউথখালী, তাফালবাড়ী, ধানসাগর, কদমতলা সহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক বলেন, ১০ কেজি ওজনের উচ্চ ফলনশীল এক বস্তা ধানের দাম সরকারি ভাবে ৫৫০ ও ৬২০ টাকা হলেও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে প্রতি বস্তা ৮০০, ১০০০ ও ১২০০ টাকা পর্যন্ত দাম নিচ্ছে এবং বীজ ধান ক্রয় নিয়ে দামাদামি করলে ধান নেই বলে অনেক কৃষককে ফিরিয়ে দেন মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের অনেকেই। উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মঠেরপাড় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার ও বানিয়াখালী বাজারের ব্যবসায়ী আনসার আলী বলেন, সম্প্রতি তারা রায়েন্দা বাজারের দু’ডিলারের নিকট থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের কয়েক বস্তা বীজ ধান ৮৫০ টাকা দরে ক্রয় করেন। তাও আবার চাহিদা মতো পাননি। স্থানীয় এক সমাজ সেবক বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ধান বিক্রি করলে তা চাষাবাদে আগ্রহ হারাতে পারে এ অঞ্চলের কৃষকরা। এছাড়া যে সকল অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্যে ধান বিক্রি করে সরকারের বদনাম করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। তবে, ডিলাররা অতিরিক্ত দাম নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তারা সরকার নির্ধারিত নিয়মেই বীজ বিক্রি করছেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি দাম নিয়ে থাকলে তার দায় তাদের নয়।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বলেন, বেশি দামে ধান বিক্রির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। শীঘ্রই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে অভিযান চালানো হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয় খুলনা বিভাগের বিএডিসির উপ-পরিচালক মোঃ লিয়াকত আলী জানান, বীজ ধানের কোন সঙ্কট নেই এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের বীজ বিক্রির বিষয়টি বৈধ নয়। এছাড়া বীজ ধান বিক্রিতে কোন ডিলার অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের লাইসেন্স বাতিলের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment