জরাজীর্ণ স্টাফ কোয়ার্টার নিয়ে ধুকছে খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার! 

মোঃ আল মামুন খান, খুলনাঃ খুলনার বয়রা এলাকায় ‘বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটি অবস্থিত। খুলনা বিভাগের দশ জেলার জন্য এই একটিমাত্র গণগ্রন্থাগার যা এলাকার মানুষের কাছে ‘পাবলিক লাইব্রেরি ‘ হিসেবে বহুল প্রচারিত। এর সীমান প্রাচীর ঘেষেই সরকারি মহিলা কলেজটির অবস্থান। শহরের ভিতরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল জ্ঞান পিপাসু ছাত্রছাত্রী  ছাড়াও বইপাগল সাধারণ মানুষের জ্ঞান পিপাসা মেটানোর একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান এই গণগ্রন্থাগারটি।
প্রবেশ মুখেই নান্দনিক শিল্পকর্ম সমৃদ্ধ একটি বিশাল তোড়ন প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকেই যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। সিমেন্টের পায়ে চলা পথকে ঘিরে খুব সুন্দর এক টুকরো  নয়নাভিরাম উদ্যান। ফুলে ফুলে সমৃদ্ধ নজরকাড়া!  এরপরই মূল ভবন।
মূল ভবনের উত্তর পাশে এক চিলতে সবুজ মাঠ। এই মাঠটি পদতি বছর গ্রন্থমেলায় বইয়ের স্টলের জন্য বরাদ্দ থাকে। সরেজমিন দেখা গেছে, সবুজ ঘাসের সাথে সাথে আগাছায়ও পূর্ণ হয়ে আছে মাঠটি, যা প্রবেশের পরে ইতোমধ্যে তৈরি হওয়া ভালোলাগাটুকু ম্লান করতে শুরু করে। সাধারণ পাঠক এবং দর্শণার্থীদের একজনের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তারা জানান, বইমেলার মাস ছাড়া এই মাঠ এরকম অবহেলায় পড়ে থাকে। ঘাস-আগাছার জংগলে পরিণত হলেও দেখবার কেউ নেই। তবে এটা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আসা বরাদ্দটুকু যায় কোথায়? এমন প্রশ্নও করেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় পাঠক।
এরপর মূল ভবনের উত্তর-পশ্চিম পাশের স্টাফদের থাকার জন্য বরাদ্দকৃত ভবন(!) টিতে গেলে অবাক হতে হয়। বাংলা ডকুমেন্টারি কিংবা সাদা-কালো যুগের রুপালী পর্দায় পরিত্যক্ত ভবনের ছবিও এই ভবনটির মতো নয়। লম্বা একটা একতলা ভবন যার এয়ালে পলেস্তারার কোনো চিহ্ন তো নাইই; বরং ভিতরের প্রাচীন লাল ইটের ক্ষয়ে যাওয়া অংশগুলি মুখ ব্যদান করে চেয়ে উপহাস করছে বলে মনে হলো।
এই ভগ্ন দালানটিতে বেশ কয়েকটি পরিবার বাস করে। শুরুতেই একটি টিউবওয়েল বসানো রয়েছে। এরপর নোংরা পরিবেশে ঘাসবিছালিতে পূর্ণ স্থানে এই স্টাফদের থাকার ভবনটি। একজানে সাপ-বিচ্ছুদের বসবাস দেখেই প্রথমে মনে আসবে যে কারো।
মামুন নামের একজন যিনি এই গণগ্রন্থাগারের স্টাফ, কথা হয় তার সাথে। তিনি জানালেন, এভাবেই এখানে থাকতে হচ্ছে। নিজেরা নিজেদের টাকা খরচ করে ভবনটির ভিতরের দিকে নিজেদের বসবাসের জন্য কিছু অংশ ‘রিপেয়ার’ করে পরিবার নিয়ে কোনোভাবে থাকছেন। বর্ষার সময়ে কষ্ট সবচেয়ে বেশী হয়। আর গরমের সময়ে সাপের উপদ্রব তো আছেই। বেড়ে ওঠা জংগলের দিকে প্রশাসনের কারোর নজর নেই, তাই এই উপদ্রব সয়েই এভাবে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন স্টাফেরা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন এখানের অধিবাসী  আক্ষেপ করে বলেন, নামেমাত্র স্টাফ কোয়ার্টার। নিজের চোখেই তো দেখছেন, এখানে কিভাবে মানুষ বাস করতে পারে? এর সংষ্কারের জন্য কি বরাদ্দ নেই? বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার এটি, এর কেন এই অবস্থা হবে?
গ্রন্থাগারের ভিতরে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাওয়া না যাওয়ায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া যায় নাই। তবে অন্য যারা ভিতরের দায়িত্বশীল রয়েছেন, এই স্টাফ কোয়ার্টারের বিষয়ে তারাও আগবাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের ‘সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান ‘ আহসানউল্লাহর মুঠোফোনে কল করা হলেও মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়াতে এই ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
প্রদীপের নিচের অংশের অন্ধকারের মতোই খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের একমাত্র স্টাফ কোয়ার্টারটি – এমনটি জানালেন এখানে আসা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একজন ছাত্র। এই ভবনটিকে অবিলম্বে পরিত্যক্ত ঘোষোনা করা উচিত, যে কোন সময় ভবনটির দেয়ালসহ ছাদ ধ্বসে  পড়ে প্রাণহানির আশংকা রয়েছে জানিয়ে  এ বিষয়ে গণমাধ্যমের দ্বারা খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাধারণ পাঠকসহ স্থানীয় জনগন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment