অদম্য মেধাবী জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কাকলীর,আনন্দর বদলে কান্নার রোল

মোঃ ইব্রাহীম,মাদারীপুর প্রতিনিধি ॥
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ইলিয়াস আহমেদ
চৌধুরী কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী কাকলী আক্তারের মিষ্টি কেনার
সামর্থ্যহীন পরিবারটিতে জিপিএ-৫ অর্জনের কোন আনন্দ লাগেনি।
কলেজের কত্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিনা খরচে লেখাপড়া করে
জিপিএ -৫ অর্জন করলেও ভাল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির বদলে চরম
হতাশায় নিমজ্জিত কাকলীর পরিবারে এখন লেখাপড়া চালানো নিয়েই শংকা।
উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফলাফল । চলতি বছরের এসএইচসি পরীক্ষার্থীদের
মধ্যে উপজেলার একমাত্র জিপিএ-৫ ধারী। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা
করতেই চোখে পড়ে মা মেয়ের কান্নার রোল। মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়নতো দূরে
থাক দিনমজুর বাবা মসজিদ থেকে আনা একটি মাত্র জিলাপী তুলে দিল
মেধাবী মেয়েটিকে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর
উপজেলার ৫ টি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ
উত্তীর্ন হয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে ও উপজেলার একমাত্র জিপিএ-৫ অর্জনধারী ওই
কলেজের মেধাবী ছাত্রী কাকলী আক্তার। দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত
কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটি উপজেলার পাচ্চরে একচালার একটি খুপড়ি ঘরে
বসবাস। ৫ ভাই বোনের সংসারে বাবা হারুন মাদবর দিনমজুর মা তাসলিমা
বেগম সংসারী। অন্যের জমিতে বাবা কামলা(দিনমজুরি) দিয়েই চলে
সংসার। ছোট সময় থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে
পাচ্চর বালিকা বিদ্যালয় থেকে জীবন সংগ্রাম করে জিপিএ-৫ অর্জন করে।
পরে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ
চৌধুরী কলেজ কত্তৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ দেন। বেতনসহ যাবতীয়
খরচ বিনামূল্য করে দেয় কলেজ।যাতায়াতসহ বাকি খরচ চালাতে পাশের বাড়ির
শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজেই চালাতো নিজের খরচ। দিনমজুর বাবা
খাবার জোগাতেই হিমশিম খাওয়ায় টাকার অভাবে কলেজের মাত্র ৪টি বই
কিনতে পারে কাকলী। অন্যের পুরাতন বই হাওলাদ করে পড়তে হয়েছে তাকে।
বাড়িতে বিদ্যুত না থাকায় দিনের বেলাকেই বেশি বেছে নিতো পড়ার
ক্ষেত্রে। খাতা ফুড়িয়ে যাওয়ার শংকায় পড়তো বেশি লেখতো কম। ভাড়া না

থাকায় অনেকদিন কলেজও বাদ দিতে হয়েছে। মা বাবা মন ভরে পরীক্ষায় সময়
কোন ভাল কোন খাবার মুখে তুলে দেয়া ছিল দুঃস্বপ্ন।
সরেজমিনে কাকলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাচ্চর ২ নং ওয়ার্ডের
একচালার এক জরাজীর্ন টিনের ঘরে বসত ৫ ভাইবোনসহ পরিবারটির।
প্রতিবন্ধী বাবা বাড়ি নেই ভোরে বের হয়ে গেছে দিনমজুরির কাজে।
ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে মাসহ কাকলীর লুকানোর চেষ্টা করে চাপা
কান্না। একপর্যায়ে সরল স্বীকারোক্তি অর্থাভাবে প্রস্তুতিতো দূরে থাক
এখনো চিন্তাতেই আনেনি বিশ^বিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতির কথা। মেয়ের এত
ভাল ফলাফলের পরেও টাকার অভাবে মিষ্টিও কিনে খেতে পারেনি তারা। বাড়ি
থেকে বের হওয়ার পথে দেখা যায় কাকলীর বাবা কাজ শেষে খুড়িয়ে হেটে
বাড়ি ফিরছে হাতে এক পিচ জিলাপী। মসজিদ থেকে দেয়া ওই জিলাপীটাই
বাবা না খেয়ে এনেছে মেয়ের ভাল ফলাফলের জন্য।
পাশের বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, এই পরিবেশে থেকে কাকলীর এই
ফলাফল সত্যিই অবিশ^াস্য । এত ভাল রেজাল্ট করেও ওদের বাড়িতে আনন্দ নেই
বরংচ যেন শোক। ভাল জায়গায় ভর্তিতো দূরে থাক ওদের ঢাকায় যাওয়ার ভাড়াও
নেই।
কাকলীর মা তাসলিমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কামলা দিয়ে ৭ জনের
সংসার চালানোই কঠিন। রেজাল্টের পর মিষ্টিও খাওয়াতে পারি নাই মেয়েকে।
ভাতই জুটানোই কষ্ট। আমাগো সামর্থ্য নাই ওরে পড়ানোর। ও নিজে কষ্ট
কইরা এই পর্যন্ত আইছে।
বাবা হারুন মাদবর বলেন, একদিন কাজ না করলে সংসারই চলে না। ও পড়ছে
নিজেরডা দিয়াই। এহন ভাল জায়গায় পড়তে চায় । আমরা কেমনে কি করমু।
অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তার বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, কলেজ ও স্কুলের স্যারদের
সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করেই পড়ছি। কলে আমার খুব পড়ার ইচ্ছা। কিন্তু
আমার মা-বাবাতো পারে না। তাই জানি না কি আছে ভাগ্যে। তবে আমি
পড়তে চাই।
পাচ্চর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক বলেন , কলেজ
কত্তৃপক্ষ বিশেষ করে আমাদের এমপি লিটন চৌধুরী ও তার বোনের দেয়া
বৃত্তির টাকা এবং কলেজটির সহযোগিতায় অতি দরিদ্র কাকলীর লেখাপড়া
চালিয়ে যেতে পেরেছে। সবার সহযোগিতা পেয়ে ও নিজেকে প্রমানে
সক্ষম হয়েছে। ওর মতো মেধাবীদের আরো এগিয়ে যেতে সকলের
সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, কাকলী
অদম্য মেধাবীদের মধ্যেও সেরা । ও এই উপজেলার এবারের একমাত্র জিপিএ-৫
প্রাপ্ত। কাকলী আক্তার অদম্য মেধাবী ওর পাশে আমরা শুরু থেকেই ছিলাম। সবাই
ওর জন্য এগিয়ে আসলে ও অনেক এগিয়ে যাবে। ওকে সহযোগিতার জন্য ওদের
নিজেদের ০১৯৮৮৩৭১৬৫৮ নাম্বারে অথবা অধ্যক্ষর নাম্বারে ০১৭১৬৩৭৭২৯৬
যোগাযোগ করতে পারেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment