নওগাঁয় ফসল রক্ষায় কাকতাড়–য়া

 

বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ : গ্রামাঞ্চলে এখনো মায়েরা ছোট্ট শিশুর কপালে
কালো টিপ এঁকে দেন, যাতে কারো নজর না লাগে। যাবার পথে কালো বিড়াল অতিক্রম করলে যাত্রা অশুভ
হবে। পরীক্ষার আগে ডিম খেলে ফলাফল খারাপ হবে। বিজ্ঞানের যুগেও এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের
অভাব নেই গ্রামীণ জনপদে। তেমনই এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল বাঁচাতে
কাকতাড়–য়া (মানুষের প্রতীক) ব্যবহার করছে। কৃষকদের বিশ্বাস, কাকতাড়ুয়া স্থাপন করলে ক্ষেতের
ফসল দেখে কেউ ঈর্ষা করবে না বা ফসলে কারো নজর লাগবে না। ফসল ভাল হবে। আর মিলবে আশানুরূপ
ফসল এবং সারা বছর ভাল থাকবে তারা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেলেও নওগাঁর
বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষেতের ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছে। খড়ের
কাঠামোর মাথায় মাটির হাঁড়ি আর তাতে চুন দিয়ে কাঁচা হাতে এঁকে দেয়া হয় নাক, চোখ-
মুখ। পরিত্যক্ত জামা গায়ে জড়িয়ে জমিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, নাম তার কাকতাড়ুয়া।
কাকতাড়–য়া হচ্ছে কাক কিংবা অন্যান্য পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্য জমিতে রক্ষিত মানুষের
প্রতিকৃতি বিশেষ। এর মাধ্যমে পশু-পাখিকে ক্ষেতের ফসল কিংবা বীজের রক্ষণাবেক্ষনের লক্ষ্যে
নিরুৎসাহিত করা হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেখা যায়, ফসলি জমিতে পশু-পাখি তাড়ানোর
জন্য কাকতাড়ুয়া জমির মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মানুষ
দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়–য়া দেখে ক্ষেতে পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয় না।
বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে জমিতে বেগুন, খিরা, মরিচ, আলু, পেঁয়াজ, শসা, টমেটো জাতীয়
ফসল রোপণ করা হয় তখনই এই কাকতাড়–য়াদের ব্যবহার করা হয়।
এ ব্যাপারে কৃষক সুদর্শণ কর্মকার, চঞ্চল ও শাওন জানান, কাকতাড়–য়া পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর
জন্যে জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশ্যে
জমিতে কাকতাড়ুয়া দাঁড় করে রাখা হয়। এটি এক প্রকার ফাঁদ হিসেবে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে
তৈরি করা হয়। সনাতনি ধারায় এটি মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল রেখে পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে
সঙের ন্যায় সাজানো হয়। তারপর জমির মাঝামাঝি স্থানে খুঁটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখে।
এটি বাতাসে দুলতে থাকায় পাখির উৎপাত ও তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস
চালানো হয়। কাকতাড়ুয়ার সহজ যে চেহারা দেখা যায়, তা হলো একটা খাড়া লম্বাকৃত দন্ডের
উপরের এক-তৃতীয়াংশে ভূমি সমান্তরালে আড়াআড়ি করে আরেকটি দন্ড বেঁধে দু’পাশে হাত
ছড়িয়ে দাঁড়ানো মানুষের আকৃতি তৈরি করা হয়। তারপর এই আকৃতির গায়ে জড়িয়ে দেয়া
হয় পুরনো শার্ট, কিংবা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি। লম্বাকৃত দন্ডের উপরের মাথায় রেখে দেয়া হয় একটি
মাটির পাতিল। এতে পাতিলের তলা বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে আর একটা মানুষের গোলাকার মুখের
আকৃতির মত দেখায়। কেউ কেউ সেই পাতিলের তলাকে আরো বেশি বাস্তবসম্মত করতে সেখানে
চোখ-মুখ এঁকে মানুষের আদল স্পষ্ট করেন।
কাকতাড়ুয়া প্রসঙ্গে মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম মফিদুল ইসলাম
বলেন, ফসলের কোন ক্ষতি হবে না- এমন আত্মবিশ্বাস থেকেই প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষেতে
কাকতাড়–য়া স্থাপন করে। চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষক আগের মত আর
কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment