নদী গবেষনার  ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালকের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ চরমে

ফরিদপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আবুল এহসান মিঞার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালকের দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও ফটোগ্রাফার হয়েও উপ পরিচালকের দায়িত্ব পেয়ে আবুল হাসান দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সাত বছর ধরে অফিসে অনুপস্থিত কর্মচারী উমর ফারুককে মৃত্তিকা টেকনিশিয়ানকে (গ্রেড-বি) কর্তব্যকাল দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে চাকুরীতে পূর্নবহাল করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকলেও তিনি চুক্তিপত্র করেন যা আদালত অবমাননার শামিল। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের আদেশ অমান্য করে দুই লাখ টাকা আর্থিক সুবিধা নিয়ে অর্চনা সাহা ও ফজলুর রহমান নামের দুইজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটদের নিয়ম বহির্ভুতভাবে মডেল টেকনিশিয়ান পদে পদায়ন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আবুল এহসান নগই হিসাব শাখার কর্মচারীদের ২০১৬-১৭ সালের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে প্রতিস্বাক্ষর না করে ফেলে রেখেছেন যে গুলো হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা যথসময়ে প্রতিস্বাক্ষরের জন্য উপ পরিচালকের কাছে প্রেরন করেন। কর্মচারীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা না পেয়ে তিনি এমনটি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবুল এহসান মিঞার টেস্টিং এন্ড কনসালটেন্সি ফি প্রতিদিনের জন্য পাঁচশত টাকা নির্ধারন থাকলেও তিনি বেশী টাকা উত্তোলন করছেন। এভাবে তিনি অতিরিক্ত ভাতা গ্রহন করে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, আবুল এহসান মিঞার কাছে কোন নথি গেলে অর্থের বিনিময়ে নথি ছেড়ে দেন এবং তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের নথি গোপনে সরিয়ে ফেলেন। ফটোগ্রাফার থেকে ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন আবুল এহসান মিঞা। তার নিজের রুমটি এসি, নতুন ফার্নিচার দিয়ে সাজিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি অফিসের একটি গাড়ী সার্বক্ষনিকভাবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন যা তার প্রাপ্য নয়। এ নিয়ে ৩য় ও ৪র্থ গ্রেডের বিজ্ঞানীগন এ সুবিধা হতে বঞ্চিত হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আবুল এহসান মিঞা তৃতীয় শ্রেনীর ¯œাতক ডিগ্রিধারী। প্রকল্প চলাকালীণ সময়ে দুর্বল নিয়োগবিধি অনুযায়ী ফটোগ্রাফিতে মাত্র ২১ দিনের ট্রেনিং নিয়ে তিনি প্রথম শ্রেনীর চাকুরিতে যোগদান করেন যা প্রকল্প উত্তরকালীন কোন মতেই গ্রহনযোগ্য নয়। উপ পরিচালকের কোন যোগ্যতা না থাকা সত্বেও তিনি ক্ষমতা দেখিয়ে ফটোগ্রাফার পদ হতে (উপ পরিচালকের পদে পদোন্নতি প্রদান সুযোগ না থাকা সত্বেও ) অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ১২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের প্রেষন-১ অধিশাখা কর্তৃক উপ সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের উপ পরিচালক (প্রশাসন) পদে প্রেষনে বদলী করা হলেও আবুল এহসান মিঞা রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে তার নিয়োগ বাতিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং নিজে এ পদে থাকার চেষ্টা করছেন। নামপ্রকাশ না করার শর্তে নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, একজন ফটোগ্রাফারকে ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালকের দায়িত্ব দেয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালকের পদ থেকে আবুল এহসান মিয়াকে সরিয়ে না দিলে নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। আবুল এহসান মিঞার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নদী গবেষনা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আবুল এহসান মিঞার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment