নওগাঁয় ”স্বপন পান ষ্টোর” মুখরোচক স্বপন মামার বাহারী স্বাদের পান

 বিকাশ চন্দ্র প্রাং, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ ঃ

যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম মহেসখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম কিংবা পালের লাও পালের লাও পান খেয়ে যাও, ঘরে আছে ছোট বোনটি তারে নিয়ে যাও। পান নিয়ে এমন আরও অনেক গান, কবিতা ,প্রবাদ আছে যা আমাদের সাহিত্য ভান্ডার কে করেছে সমৃদ্ধ। নওগাঁ শহরের বীজের মোড়ে ছোট্র একটি দোকান যার নাম ”স্বপন পান ষ্টোর” পান-সুপারী আর নানান মশলা দিয়ে তৈরি একখিলি পান খেতে উৎসুক মানুষের দল। স্বপন মামার পান খেয়ে মুখ লাল করেনি এমন পান প্রেমী খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রতি খিলি পানের দাম ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। শাহজাদী ১০ বেনারশ ১৫ আর বোম্বে মাসালা খিলি বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। পানে কী মেশান-এমন প্রশ্ন করতেই মুচকি হাসেন স্বপন মামা। তার পর বলতে থাকেন দম না নিয়েই কয়েক ডজন স্বাদ বৃদ্ধিকারী মসলার নাম এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোরব্বা, খেজুর, খোরমা, তানশিন, তেরেঙ্গা, চমন বাহার, এলাচ, নারিকেল, কিসমিস, সেমাই, ঝুড়া ইত্যাদি। তিনি বলেন, এসব মসলার সবক’টি দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর এই বাহারী মসলার স্বাদের কারনেই তার দোকানের বিশেষত্ব। স্বপন মামার দোকানে পান খেতে এসেছেন শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা মো: একাব্বর আলী ( ৫৫) তার সাথে কথা বলতেই তিনি মৃদু হেসে জানালেন বাবা আমি তো স্বপনের দোকানের পান ছাড়া অন্য কারো দোকানের পান খাইনা প্রায় ২৫ বছর ধরে এই দোকানের পান খেয়ে আসতেছি। তার বানানো পান আমার মুখে অন্য রকম একটা স্বাদ এনে দেয়। আত্রাই উপজেলার ভোঁপারা গ্রাম থেকে ব্যক্তিগত কাজে নওগাঁয় এসেছেন আজিজুল হক (৪০) কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে স্বপন মামার দোকানে এসেছেন পান কিনতে শাহাজাদী একটি পান মুখে দিয়েছেন এবং দুই খিলি পান কাগজে মুড়ে নিয়েছেন বাসায় নিয়ে যাবেন বলে। তিনি বলেন আমি যখনই নওগাঁতে আসি স্বপনের দোকানের বাহারী মসলা দিয়ে পান না খেলে আমার অপূর্নতা থেকে যায়। আর দুই খিলি পান নিয়ে যাচ্ছি বাসায় গিয়ে খাবো। পান বিক্রেতা স্বপন মামার সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় ৪০ বছর যাবৎ পান বিক্রি করে আসছি প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৮ বিরা পান বিক্রি হয় এবং রাতের বেলা ১০ থেকে ১৫ বিরা বিক্রি হয়ে থাকে। দিনে আমার বড় ছেলে ইমন আর রাতে আমি দোকানে বসি। তিনি আরও জানান , অনেক মানুষ আসে আমার দোকানে পান খেতে মাঝে মাঝে এত ভিড় হয় যে একা হিমসিম খেয়ে যাই। পান বিক্রি করেই দুই ছেলের লেখা পড়া আর সংসার চলে। লেখা পড়া করে দুই সন্তান চাকুরি করবে তবেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। প্রচলিত নানা গল্পগাথায় রাজ-রাজরাদের পানবিলাসের বর্ণনা মেলে। সেসব পান সাজানো হতো দুর্লভ সব মসলা দিয়ে। মেশানো হতো বহুমূল্য সুগন্ধি। পান যার ইংরেজী নাম: ইবঃবষ খবধভ পানের পাতা খাওয়ার জন্য চাষ করা হয়। পান লতা জাতীয় গাছ। এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। পানের রস হজমে সহায়তা করে, রুচি বৃদ্ধি করে এবং মুখের দুর্গন্ধ নাশক হিসাবে কাজ করে। বিজ্ঞানীদের ধারনা যে পানের আদি জন্মস্থান মালয়েশিয়ার স্যাঁতসেঁতে স্থানে। বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও রাজশাহী জেলায় ব্যাপকভাবে পানের চাষ হয়। তবে অন্যান্য জেলায়ও পানের চাষ বৃস্ততি লাভ করছে। সাধারণত নানা জাতের পান দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ঢলপান বা বাংলাপান, মিঠাপান, ছাঁচিপান, লালিপান, কর্পূরীপান, গাছপান ইত্যাদি।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment