বাউফলে এক নারীকে তুলে নিতে সন্ত্রাসী হামলা, দেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ছয়

 বাউফল(পটুয়াখালী):

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আক্তার জাহান মুন্নি (২৬) নামে এক নারীকে জোড়পূর্বক তুলে নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। ওই সময় ওই নারীকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। আর তাঁর চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে ছয় কিশোরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। ওই সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে ১ টি ছোড়া, ১ টি চাপাতি, ১ টি চাকু ও ১ টি খেলনা পিস্তল জব্দ করা হয়। গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কালিশুরী ইউনিয়নের ধলাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তালাক দেওয়া স্বামীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা রুজু করেছে। হামলার নেতৃত্বে থাকা ওই ব্যক্তির নাম মো. ইমামুল হোসেন মিলন (৪৫)। পটুয়াখালী পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আবদুল খালেক মিয়া। স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই নারীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধলাপাড়া গ্রামের আবদুল জলিল মল্লিকের মেয়ে আক্তার জাহান মুন্নির সঙ্গে ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী পৌরসভার সবুজবাগ এলাকার আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে মো. ইমামুল হোসেন মিলনের (৪৫) বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর ব্যবসার নাম করে মিলন তাঁর স্ত্রীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় মুন্নিকে প্রায়ই মারধর করতেন মিলন। অসহনীয় নির্যাতনের হাত থেকে বাচার জন্য মুন্নি তাঁর স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে আসে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই স্বামীকে তালাক দেন। এতে ক্ষুদ্ধ হন মিলন। গত সোমবার সন্ধ্যা সারে সাতটার দিকে মিলনের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে মুন্নিকে জোড়পূর্বক অপহরন করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় মিলন। ওই সময় মুন্নিকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয়। মিলন টেনেহিচড়ে মুন্নির পরিধেয় পোশাক ছিড়ে ফেলে। মুন্নির চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে এবং ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিতে থাকে। তখন তাঁরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে কাছিপাড়া বাজারের চৌমাথায় পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন ছয়জনকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। তবে মিলন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আর আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি স্কুল ব্যাগ পাওয়া গেছে। ওই ব্যাগের মধ্যে ১ টি ছোড়া, ১ টি চাপাতি, ১ টি চাকু ও ১ টি খেলনা পিস্তল পাওয়া যায়। এসব জিনিসসহ ওই রাতেই পুলিশ তাঁদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটক ছয় ব্যক্তি হলেন পটুয়াখালী পৌরসভার শান্তিবাগ এলাকার মেহেদী হাসান (২০), সবুজবাগ এলাকার রাজিব দেবনাথ (২৪), মো. আলামিন (২০) ও জোবায়ের আকন (২১), বরগুনার মরখালী গ্রামের মিজানুর রহমান (২০) ও বাউফলের মান্দারবন গ্রামের মো. রাকিবুল ইসলাম (১৯)। আটক আলামিন কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন,‘মিলন ভাই তাঁদেরকে শশুরবাড়ি বেড়ানোর কথা বলে এনেছেন। এর আগেও তাঁদের মধ্যে দুজন ওই বাড়িতে এসেছিলেন। ভাবি (মুন্নি) যে মিলন ভাইকে তালাক দিয়েছে কিংবা মিলন ভাই যে তাঁকে (মুন্নি) জোরপূর্বক নিতে এসেছে সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। মুন্নির বাবা আবদুল জলিল মল্লিক অভিযোগ করে বলেন,‘তাঁর মেয়েকে জোড়পূর্বক অপহরন করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ঘটনায় মামলা করার জন্য সোমবার দিবাগত রাত ১২ পর্যন্ত বাউফল থানায় ছিলেন। আজকে (মঙ্গলবার) সকাল বেলা এসে জানতে পারি ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে প্রধান আসামিকে বাদ দিয়ে মামলা করেছে।’ এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন,‘আটককৃতদের সঙ্গে অস্ত্র থাকায় পাবলিক বাদী হয়ে মামলা করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে অস্ত্র আইনে আটক ছয়জনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।এখন তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এতে মিলনের সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই তাঁকে অভিযুক্ত করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment