জাতীয় শোক দিবসে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভরে ওঠে ফুলে ফুলে

জাতীয় শোক দিবসে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভরে ওঠে ফুলে ফুলে

যতদূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। কালো রঙের বসনে হৃদয়ের বেদনাকে সঙ্গী করে তাদের আগমন। তারা আসেন জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিয়ে। জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার নামে লাখো মানুষের ঢল। এ ঢলের মধ্যে অনেকেই আসেন প্রাণের টানে। তাদের ভালোবাসার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে স্থাপিত তার প্রতিকৃতি।

১৫ আগস্ট জাতির সবচেয়ে বেদনাবিধুর দিন। ৪৩ বছর আগে এ দিনেই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে ঘাতকের গুলিতে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার কাকডাকা ভোরেই জনতার ঢল নামে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। যেসব পথ ধানমণ্ডির রাসেল স্কোয়ারমুখী তার প্রতিটিতেই মানুষ আর মানুষ। বৃদ্ধ থেকে শিশু; সরকারি আমলা থেকে দিনমজুর কামলা— সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন একবিন্দুতে মিশে যায়। পরনে লাল-সবুজ, সাদা-কালো রংয়ের পোশাক, বুকে কালোব্যাজ, হাতে কালো পতাকা। তীব্র রোদ বাদ সাধতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিতদের। সবাই হাতে হাত রেখে মিশে যায় শ্রদ্ধাঞ্জলিতে।

জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে লাখো মানুষের ঢল নামে

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লালমাটিয়ার বাসিন্দা আহমেদ ইমতিয়াজ বলন, ‘কত সংগঠন, কত প্রতিষ্ঠান এসেছে আজকে ফুল দিতে। কিন্তু ভাবা যায়, যে মানুষটি একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন করে এনেছিলেন তার জানাজায় লোক হয়নি পঞ্চাশজনও। আরও হাজার বছর এভাবে ফুল দিলেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়।’

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় সুমাইয়া বিনতে আজিজের সঙ্গে। ওয়াইডব্লিসিএ স্কুলের এ শিক্ষার্থীর ভাষায়, ‘বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেললেও, মন থেকে তাকে দূর করতে পারেনি।’ বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চায় এ কিশোরী।

জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে এসেছিল শিশুরাও

হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদনানের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশেই তার বাসা। কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই তিনি বলেন, “আজকে সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে চায়। কিন্তু তার আদর্শ থেকে বেশিরভাগ মানুষই বিচ্যুত। তারা বঙ্গবন্ধুকে ‘পণ্য’ হিসেবে ব্যবহার করেন। এদের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে হবে। না হলে এ দেশ থেকে আবারও বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যাবেন।”

আগামী প্রজন্মকে শোকের এই দিনের তাৎপর্য বোঝাতে অনেক বাবা-মা নিয়ে এসেছিলেন তাদের ছোট সন্তানকে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা আবু আহমেদ জানান, সন্তানকে শুধু টেলিভিশনের পর্দায় দেখিয়ে এই দিনটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাননি। তাই ভিড় পেরিয়ে সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment