রাজশাহীতে দেশি বলে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় গরু | দৈনিক আগামীর সময়

রাজশাহীতে দেশি বলে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় গরু | দৈনিক আগামীর সময়

রাজশাহীর সিটিহাটে দেশি হিসেবেই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় গরু। যদিও মাস তিনেক আগে আসা এসব গরু মোটাতাজা করেছেন মৌসুমি খামারিরা। দেশি হিসেবে সেগুলোই এখন বাজারে উঠেছে।

খামারি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আসা এসব গরু প্রাকৃতিক উপায়েই মোটাতাজা করা হয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে প্রতিবছরই এমনটি করেন মৌসুমি খামারিরা। এসব গরুতে লাভও হয় বেশি। ফলে দিন দিন দেশি গরু বাদ দিয়ে ভারতীয় গরু মোটাতাজায় ঝুঁকছেন অনেকেই।

বুধবার হাটবার ছিল রাজশাহীর সিটিহাটে। হাটে গিয়ে দেখা গেলো কোরবানিযোগ্য গরুর আধিক্য। এর সিংহভাগই ভারতীয় গরু। ভারতীয় গরুগুলো দেশীয় গরুর চেয়ে তুলনামূলক বড় সাইজের। ৭৫ হাজার থেকে এক লাখে মিলছে এসব গরু। হাটে দেশি কোরবানিযোগ্য গরুও তুলেছেন খামারিরা। তবে ৪০ হাজার থেকে দেড়লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুগুলো।

ভারত সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার দিয়াড় মানিকচক এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক। বুধবার হাটে ২২টি গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। এই গরু ব্যবসয়ী বলেন, তিনমাস আগে সীমান্তেই ভারত থেকে আনা এসব গরু কিনেছেন। এরপর বাড়িতে রেখে প্রকৃতিক খাবার খাইয়ে মোটাতাজা করেছেন। এলাকার অনেকেই কোরবানি সামনে রেখে ভারতীয় গরু মোটাতাজা করে বাজারে তুলেছেন।

পবা উপজেলার বড়গাছি এলাকার গরু ব্যবসায়ী নামাজি শেখ। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু কেনেন তিনি। তিনিও হাটে তুলেছেন ৮টি কোরবানিযোগ্য বলদ। এর সবগুলোই ভারতীয়। তিনি বলেন, সিটিহাট থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে মোটাতাজা করেছেন গ্রামের লোকজন। লাভ বেশি হওয়ায় ভারতীয় গরু মোটাতাজা করেন এলাকার মৌসুমি খামারিরা।

এদিকে, রাজশাহীর কাস্টমস জানিয়েছে এ বছরের মে থেকে জুলাই এই তিন মাসে রাজশাহী অঞ্চলের সাতটি করিডোর হয়ে এসেছে ৬৩ হাজার ৮৭৮ গবাদি পশু। গত বছরের একই সময়ের এসেছিল এর প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত এসেছিল এক লাখ ৭৫ হাজার ২৮।

এ বছর কোরবানির আগের এই তিন মাসে ৪৫ হাজার ৫১৮ গবাদি পশু এসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট করিডোর হয়ে। গত বছর একই সময়ে এই করিডোর পেরিয়েছে এ লাখ ৩০ হাজার ৬৮০ গবাদি পশু।

Rajshahi-Photo

গত বছর এই তিন মাসে জেলার বাখেরআলী হয়ে গবাদি পশু এসেছিল ৮ হাজার ১১১টি। আর এ বছর এসেছে মাত্র ৮৫টি। ভোলাহাটে এ বছরের জুন-জুলাইয়ে এসেছে ৩৬৪টি গবাদিপশু। গত বছরের মে-জুন মিলিয়ে ৫৪৩টি করিডোর পেরিয়েছে।

এ বছরের এই তিন মাসে নওগাঁর খঞ্জনপুর করিডোর পেরিয়েছে ১৮৭টি গবাদিপশু। গত বছরের এই সময় এ করিডোরটি বন্ধ ছিল। এ বছর বন্ধ রয়েছে রাজশাহীর চারঘাট করিডোর। গত বছরের এই তিন মাসে করিডোর পেরিয়েছে এক হাজার ৬৭৫ পশু।

এ বছরের গত তিন মাসে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জে ৩ হাজার ৩১১ এবং রাজাবাড়িতে ২২ হাজার ৬২৪ গবাদিপশু এসেছে। গত বছরের একই সময় এসেছিল সুলতানগঞ্জে ২১ হাজার ৫১৮ এবং রাজাবাড়িতে ৮ হাজার ২৯৪। গত জুলাইয়ে জেলার শ্যামপুর হয়ে এসেছে ৯ হাজার ৮১৭টি গবাদিপশু। গত বছরের মে থেকে জুলাইয়ে এসেছিল ৩ হাজার ৫১৮ পশু।

কাস্টমস আরও জানায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এসেছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৬৪ গবাদিপশু। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২৬ কোটি ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা।

এরপর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে আসা ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫১১ গবাদিপশু থেকে রাজস্ব আসে ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭০০ টাকা। চলতি অর্থবছরের জুন মাসেই এসেছে ৪৮ হাজার ৩১০ গবাদিপশু। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, এ অঞ্চলে কোরবানিযোগ্য পশুর মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত। নতুন করে পশু আমদানির প্রয়োজন নেই। তারা বলছে, বিভাগের আট জেলায় ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ১৬০টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।

এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৭টি ষাঁড়, ৮৮ হাজার ৮৫১টি বলদ, ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৪টি গাভি, ১৩ হাজার ৭৯টি মহিষ, ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৭টি ছাগল এবং ২ লাাখ ২৮ হাজার ২০৩টি ভেড়া। অন্যান্য পশুর তালিকায় রয়েছে ২ হাজার ৪৬৯টি।

Rajshahi-Photo

এ বছর রাজশাহী জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪০১। এ ছাড়া নওগাঁয় এক লাখ ৭৯ হাজার ৮২৮, নাটোরে ৪ লাখ ১০ হাজার ১৭৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৯ হাজার ৭২৩, পাবনায় এক লাখ ৬৩ হাজার ৩৮০, বগুড়ায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৫, সিরাজগঞ্জে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৯৯ এবং জয়পুরহাটে এক লাখ ৩ হাজার ৯১৫ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানিযোগ্য পশুর তালিকা করেছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। ওই তালিকা অনুযায়ী বিভাগজুড়ে কোরবানি পশুর মজুত পর্যাপ্ত।

তিনি আরও বলেন, এখানকার পশুহাটগুলোতে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকৃত কোরবানি পশু বিক্রি হচ্ছে। ক্ষতিকর রাসায়নিকে পশু মোটাতাজা ঠেকাতে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দল বাজারে নজরদারি চালাচ্ছে।

ভারত থেকে এখননও গবাদিপশু আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, মূলত দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা মেটায় ভারত থেকে আসা গবাদিপশু। তবে মাস তিনেক আগেই মৌসুমি খামারিদের কেউ কেউ ভারতীয় গরু কিনে মোটাতাজা করেছেন। সেগুলোই দেশি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে।

জানতে চাইলে সিটিহাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, এখানকার লোকজন কোরবানির জন্য দেশি গরু পছন্দ করেন। তাছাড়া হাটে আমদানি হওয়া পশুর অধিকাংশই দেশি। এখন ভারতীয় গরু আসছে কম। ফলে দাম বেড়েছে দেশি গরুর।

হাটের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে এই ইজারাদার বলেন, পুলিশ ও র‌্যাবের আলাদা দল হাটে দায়িত্বপালন করছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর বাইরে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক আছে তাদের।

এছাড়া জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ নিয়ে এখনও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কুরবানি ঈদ সামনে রেখে এখন থেকে প্রতিদিনই হাট বসানোর কথাও জানান ইজারাদার।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment