দলবদলের বাজারে হার-জিত যাদের

হাট ভেঙেছে একদিন হলো। ফুটবলারর কেনা-বেচার বাজারে লম্বা ফর্দ ছিল অনেক ক্লাবের। কিন্তু কিনতে পারেনি তেমন খেলোয়াড়। কেউ আবার দলবদলের বাজারে গিয়ে বাজি জিতেছে। পাল্লা করে পছন্দের ফুটবলারও দলে টেনেছে কেউ কেউ। কোন দল আবার ‘মরা কাঠ’ বেচে ঘর করেছে ফাঁকা। দিন শেষ হার-জিত হলো কাদের সেটাই এখন দেখার পালা।

দলবদলের বাজারে সব চেয়ে লাভবান হয়েছে বার্সেলোনা। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার জায়গা কুতিনহোকে কিনে আগেই পূরণ করেছে কাতালানরা। তাও ঘাটতি থাকে কিনা, তাই তরুণ আর্থার মেলো এবং ঝানু অ্যালেক্স ভিদালকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। আবার আক্রমণভাগে ডেম্বেলের ইনজুরির কারণে গত মৌসুমে কপালে ভাঁজ পড়েছিল বার্সা কোচ ভালভার্দের।

এবার তাই তরুণ ম্যালকমকে রোমার সঙ্গে এক প্রকার নিলাম হাঁকিয়ে দলে টেনেছে বার্সা। ওদিকে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা এবং ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পাউলিনহোর মতো ‘মরা কাঠ’ বিক্রি করে ঘর ফাঁকা করেছে বার্তামেউয়ের ম্যানেজমেন্ট।

লাভ-ক্ষতির হিসেব কষলে বার্সার প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা নাজুক। রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা এবং দলের অন্যতম সেরা তারকা লুকা মডরিচকে দলে রাখতে বুকে মাটি ঠেকে গেছে রিয়ালের। বেনজেমাও যায় যায় করছিলেন। তাকে ঠেকানো গেছে শেষ মেষ। হাটের দরজা বন্ধ হবার আগে মারিয়ানোকে দলে টেনেছে লস ব্লাঙ্কোসরা।

কিন্তু নেইমার, হ্যাজার্ড, এমবাপ্পেদের কিনতে না পেরে মারিয়ানোকে ঘরে ফিরিয়ে রিয়াল ভক্তদের মন জয় করতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাজারে রিয়াল কেবল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে থলেতে ভরতে পেরেছে। কিন্তু কেইলর নাভাস, কিকো ক্যাসিল্লাদের বেঁচতে না পারায় দলে গোলরক্ষক জট সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাজিলের তরুণ ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে কিনলেও যুব দলে পাঠিয়ে দিয়েছে তাকে। সব মিলিয়ে ভুলে যাওয়ার মতো দল বদলের মৌসুম পার করেছে রিয়াল।

নয় বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে রোনালদো রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে এসেছেন। তাকে দলে টানতে পেরে লটারি জিতেছে জুভরা। অনেকের মতে, শুধু জুভরা নয় লটারি জিতেছে পুরো ইতালির লিগ ‘সিরি আ’। দিনকে দিন জনপ্রিয়তা হারানো ইতালির লিগ আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।

রিয়াল থেকে রোনালদোকে কিনতে জুভদের যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা এরই মধ্যে উঠে গেছে বলেও খবর বেরিয়েছে। বেড়ে গেছে ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর ইমেজ শর্ত। নেইমারের কারণে যেমন গত মৌসুমে ফ্রান্স লিগ ওয়ানের দিকে চোখ ছিল সবার। ঠিক রোনালদোর কারণে ইতালির দিকে ফুটবল ভক্তদের চোখ থাকবে। নেইমারই তো বলেছেন, ‘আমার মতে, রোনালদো ইতালির ফুটবল বদলে দেবে।’

স্বঘোষিত ‘স্পেশাল ওয়ান’ হোসে মরিনহো দল বদলের বাজারে ‘ফ্লপ’ হয়েছেন। লম্বা ফর্দ নিয়ে দলবদলের বাজারে ঢোকেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ। শুরুতেই কিনে নেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফ্রেডকে। এরপর দেখতে-বুঝতে, দাম-দর করতে সময় গেছে তার। চাহিদা মতো ফুটবলার আর কেনা হয়নি।

দলের চাহিদা ছিল ডিফেন্ডার। কিনতে পারেননি। মিডফিল্ডে এক ফ্রেড। আর কোন চমক নেই। আক্রমণে নিতে পারেননি নতুন কাউকে। সব মিলিয়ে দলবদলের বাজারে ভালোরকম মার খেয়েছেন মরিনহো। পর্তুগিজ কোচের দল ম্যানইউ নতুন মৌসুম শুরু করেছে বাজেভাবে। টান পড়েছে তার চাকরির সুতোয়ও। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আর একটি ম্যাচ হারলেই চাকরিচ্যুত হবেন সাবেক রিয়াল, চেলসি, মিলান কোচ।

লাভ করেছেন লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপ। গত মৌসুম জুড়ে গোলরক্ষক কারিয়ুসের ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে তাদের। এবার অল রেডসরা তাই দলবদলের বাজারে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ব্রাজিলের অ্যালিসনকে রেকর্ড দামে দলে টেনেছে। মিডফিল্ডে কিনেছে আরেক প্রতিশ্রুতিশীল ব্রাজিলিয়ান ফ্যাবিনহোকে। আক্রমণভাগে কিনেছে বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের হয়ে দারুণ খেলা  শাকেরিকে। মিডফিল্ডার নেভি কেইটাকে দলে ভিড়িয়েছেন ক্লপ। তার আগেই রক্ষণভাগের দুর্বলতা কাটাতে নিয়েছেন ভার্জিল ভ্যান ডিজককে।

এবার অবশ্য দেখার পালা মৌসুম শেষে কার হাসি বেশি চওড়া হয়। ট্রফির হিসেবে রিয়াল বেশি এগিয়ে থাকে নাকি বার্সেলোনা। অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ জুভেন্টাস কিংবা লিভারপুল জিততে পারে কিনা। ম্যানইউকে নিয়ে মরিনহো কতদূর এগুতে পারেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment