‘এই বছরটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা’

ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানের ছবি হয়তো খুব কম ভক্তের শোয়ার ঘরে ঠাঁয় পায়। নিত্য যে ফুটবলারদের নিয়ে আমাদের উন্মাদনা তিনি তাদের বাইরের। তিনি এমন কেউ যে, ভিডিও গেমের পছন্দের নাচের তালে উদযাপন করেন। বার্সায় যাবেন ঘোষণা দিয়েও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে থেকে যান। খেলেন ফুটবল তবে বাস্কেটবল ভালোবাসেন বলতে দ্বিধা করেন না। ফ্রান্সের জার্সি পরেন তবে ‘উরুগুইয়ান’ অনুভুতি ছুঁয়ে যায় তাকে।

গ্রিজম্যানকে ২০১৮ সালটা দু’হাত ভরে দিয়েছে। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে উয়েফার ইউরোপা লিগ এবং সুপার কাপ নিয়ে ডাবল জিতেছেন। ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ খেলোয়াড়ের তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। ফিফাডটকমকে গ্রিজম্যান এসবের অনুভুতি নিয়ে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জয়। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে উয়েফার ইউরোপা লিগ। সুপার কাপ জয়ের কথা তো বাদই থাকলো। নিজের ক্যারিয়ারে ২০১৮ সালটাকে কোথায় রাখবেন?

গ্রিজম্যান: ২০১৮ সাল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই বছরে তিনটি শিরোপা জিতলাম। ২০১৬ সালের কথা আমার মনে আছে। দুটি ফাইনাল হেরেছি আমি। ফ্রান্সের হয়ে ইউরোর পাশাপাশি অ্যাথলেটিকোর হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। তখন থেকেই এমন একটা বছরের অপেক্ষায় ছিলাম। ২০১৮ সালে যা যা জিতেছি তা নিয়ে আমি খুবই খুশি ও গর্বিত। আমি জেতার জন্য খেলি। ‘দ্য বেস্ট’-এর জন্য মনোনয়নও পেয়েছি। আমি এখন সেরাদের একজন। সবকিছুর জন্য ফ্রান্স দল এবং ক্লাবকে ধন্যবাদ।

প্রশ্ন: অনেকেই অনেকদিন ধরে বলছেন, মেসি-রোনালদোর যুগের অবসান হতে যাচ্ছে। কিন্তু বছরের পর বছর তারাই ছড়ি ঘুরাচ্ছেন। আপনার কি মত, তারা আরও অনেকদিন রাজ করবেন?

গ্রিজম্যান: হ্যাঁ, আরও লম্বা সময় তাদের সেরা হিসেবে দেখছি আমি। তারা সবসময়ই সেরা হতেই খেলেন। সেরা ক্লাবে খেলেন। আমার মতে, মেসি-রোনালদোর পর যারা আছেন তাদের নামও আরো কিছুদিন এভাবেই উচ্চারিত হবে। আমরা যারা তাদের নিচে আছি, মেসি-রোনালদোর সমানে ওঠার চেষ্টা করছি। ব্যবধান কমাচ্ছি। কিন্তু সত্যি বলতে, যে ব্যবধান আছে সেটাই অনেক।

প্রশ্ন: তারা দু’জন একে অপরের মধ্যে প্রতিযোগিতা নিয়ে বেশ সচেতন। ওই প্রতিযোগিতাই তাদের আরও ওপরে নিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আপনার প্রতিযোগিতাই কি আপনাকে আরও ভালো ফুটবলার হতে সহায়তা করেছে। ২০১৬ সালে যেমন আপনি বেশ ভালো করেছেন। প্রতিযোগিতাই কি আপনাকে আরও ভালো হতে সাহায্যে করেছে?

গ্রিজম্যান: আমি সবসময় আগের মৌসুমের থেকে ভালো করার চেষ্টা করি। মেসি-রোনালদোর মতো প্রতি মৌসুমে ৫০-৬০টি করে গোল করা খুব কঠিন কাজ। হয়তো এক বছর সম্ভব তবে পরের মৌসুমে আর হবে না। তারা অন্য উচ্চতার ফুটবলার। আমি নিজেকে বড়জোর নেইমার, লেভানডভস্কি, এমবাপ্পেদের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। কিংবা এডেন হ্যাজার্ডের সঙ্গে। আমি সেরা হতে চাই এবং অন্যরা কি করছে সে দিকে খেয়াল রাখি।

ছবি: ফিফাডটকম

প্রশ্ন: প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেন এবং মনে মনে বললেন, ‘আমি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’। অনুভূতিটা কেমন? এখনও কি রাশিয়া বিশ্বকাপে বুদ হয়ে আছেন?

গ্রিজম্যান: সে আপনাকে বোঝাতে পারবো না। আসলে আমাদের ফুটবল জীবন তো থেমে নেই। সবসময় অনুশীলন এবং ম্যাচ লেগেই আছে। আজ উয়েফা সুপার কাপ, তো কাল লা লিগা আছে। এরমধ্যে জাতীয় দলের ব্যস্ততা। হ্যাঁ, ফ্রান্সের জার্সিতে দুটি স্টার চিহ্ন এই ব্যাপারগুলো যখন দেখি বা মনে পড়ে একটু স্মৃতিতে ডুব দেয়। অন্য সময় ব্যস্ততা।

ফ্রান্স জাতীয় দলের প্রশ্নে বলবো, আমাদের বিশ্বকাপের খেলাটা ধরে রাখতে হবে। দুই বছর পরে ইউরোতে অংশ নেবো আমরা। এবার শিরোপাটা আমরা জিততে চাই। এরপর কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে কি করা যায় তা নিয়ে ভাববো। রাশিয়ায় আমাদের দলটা তরুণ ছিল। আমার মতে, সামনে এটা আমাদের কাজে দেবে।

প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্স ফেভারিট ছিল, শিরোপাও জিতেছে। কিন্তু কিছু বড় দল আগেভাগেই বিদায় নিয়েছিল। কাদের বিদায় সবচেয়ে অবাক করেছে?

গ্রিজম্যান: ব্রাজিল। কারণ তাদের দলটাকে খুব শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছিল। দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্ব খুব কঠিন। আমার যতটুকু মনে পড়ে তারা বাছাইপর্বে মাত্র একটা ম্যাচ হেরেছিল।

প্রশ্ন: ব্রাজিল বাদ পড়ায় সেমিফাইনালে চারটি ইউরোপের দল ছিল। এটা কি আপনার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার? নাকি ইউরোপের সঙ্গে অন্যান্য মহাদেশের দলগুলোর ব্যবধান বাড়ছে?

গ্রিজম্যান: ইউরোপের দলগুলো কৌশলগতভাবে ভালো প্রস্তুতি নেয়। এটা আমার মতামত। আমাদের কোচরা ট্যাকটিকস নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। আমার মতে, বিশ্বকাপে এটাই পার্থক্য গড়ে দেয়।

প্রশ্ন: ইউরোর ফাইনাল হারা ফ্রান্সই দুই বছর পর রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জিতল। এই দলটার কি বিশেষত্ব ছিল যা ২০১৬’র ইউরোর দলের ছিল না?

গ্রিজম্যান: জিততে গেলে সবসময় আপনার সামান্য হলেও ভাগ্যের ছোঁয়া চায়। আমাদের সঙ্গে সেটা ছিল। আমাদের দলটাও একটু আলাদা ছিল। রাশিয়া বিশ্বকাপে আমাদের আগুনে আক্রমণভাগ ছিল। পেছন থেকে আমাদের রক্ষণ ভাঙাও ছিল খুব কঠিন কাজ।

ছবি: ফিফাডটকম

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে ফ্রান্সের খেলার ধরন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অ্যাথলেটিকো নিয়ে যেমন একসময় হতো। বল দখলের কথা চিন্তা না করে জয় নির্ভর খেলার কৌশলে আপনি কোনো সমস্যা দেখেন?

গ্রিজম্যান: আমার মনে হয় বল পায়ে নিয়ে খেলার ধারণাটা পেপ গার্দিওলা এবং বার্সেলোনার তৈরি করা(হাসি)। সবাই তিকিতাকা খেলতে চায়তো এবং ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজাতো। এভাবে তারা অনেক ম্যাচও জিতেছে। কিন্তু এই ধরনটার জন্য আপনার তেমন খেলোয়াড় দরকার। যারা দর্শনটা কাজে লাগাতে পারবে। বার্সা নিজেদের একাডেমির তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে সেটা করেছে। কিন্তু ফ্রান্স বিশ্বকাপে সেভাবেই খেলেছে যেটা তাদের সঙ্গে যায়। অ্যাথলেটিকোর জন্যও কথাটা এক। আমরা অন্যের সমালোচনায় সেটা বদলাচ্ছি না।

প্রশ্ন: রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের খেলা ম্যাচগুলোর মধ্যে….?

গ্রিজম্যান: পেরু(হাসি)। আমাদের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ কোনটি ছিল সেটা জানতে চাচ্ছেন তো? পেরুর বিপক্ষের ম্যাচটা। ওই ম্যাচটাই আমাদের ৪-৪-২ ফর্মেশনে আস্থা রাখতে সাহায্য করেছিল। ফাইনাল পর্যন্ত আমরা ওভাবেই খেলেছি। প্রথমে আমরা ৪-৩-৩ ফর্মেশনে শুরু করি। ওই ম্যাচে গ্যালারির প্রায় সবাই ছিল পেরুর সমর্থক। তাদের জন্য হোম ম্যাচ ছিল ওটা (হাসি)। আমরা দল হিসেবে বেশ ভালোভাবে সেই চ্যালেঞ্জ জিতেছিলাম। পেরু খুব ভালো খেলেছে রাশিয়ায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment