শিবালয়ে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সরকারের খাদ্য বান্ধব বিশেষ কর্মসূচি ১০ টাকা দরে চাল বিক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। সুবিধাভোগীদের নাম মূল তালিকায় থাকলেও তাদের মাঝে চাল বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এ প্রকল্পের চাল দেওয়ার আগে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে তাদের নাম বিবেচনা করে উঠে  আসে মূল তালিকায়। এ সময় অনেকের হাতে পৌঁছায়নি এসব চাল সংগ্রহের কার্ড।

ডিলাররা  খাদ্য বিভাগের যোগসাজসে এসব চাল হতদরিদ্রদের মাঝে বিক্রি না করে কালো বাজারে বিক্রি করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

জানা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সরকার ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়ের কার্য়ক্রম শুরু করেন।  এর অংশ হিসেবে শিবালয়ে ৫১৫৩ জনের নামের তালিকা তৈরি করে খাদ্য বিভাগ।

এসময় নিধারিত ডিলারদের কাছ থেকে বছরে ৫ মাস ১০টাকা দরে ৩০ কেজি চাল ক্রয় করতে পারবেন সুবিধাভোগীরা। এজন্য স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে  হতদরিদ্রদের একটি তালিকা করে খাদ্য বিভাগ।

এসময় তালিকাভুক্তদের উপকারভোগী হিসাবে তাদের হাতে একটি করে কার্ড দেওয়ার কথা। কিন্তু তালিকায় নাম থাকলেও  অনেকে সরকারের এ বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে না।

কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি ডিলার প্রতিবার সুবিধাভোগীদের নামে চাল তুলছে। আবার তাদের নামে টিপসই  ও স্বাক্ষরযুক্ত  জমা দিচ্ছে খাদ্য অফিসে।

অভিযোগ রয়েছে খাদ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে  ডিলাররা কাগজ-কলমে তালিকা ঠিক রেখে কালো বাজারে এ চাল বিক্রয় করে দিচ্ছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় খাদ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে শিবালয় উপজেলার সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা উঠলে উপজেলার অনেক এলাকার বেশকিছু সংখ্যক লোক তাদের হাতে সুবিধাভোগী কার্ড না থাকায় এ চাল পাচ্ছে না।

শিবালয় উপজেলার দুর্গম কানাইদিয়া চরের  মোহন মণ্ডল কালের কণ্ঠকে জানান, আমার নাম তালিকায় থাকা সত্ত্বেও আমাকে এক বার চাল দেওয়ার পর আর দিচ্ছে না। পরের মাসে আবার চাল আনতে গেলে শিবালয় ইউনিয়নের ডিলার আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আর বলে তোদের আর চাল দেওয়া হবে না, দুইশত টাকা নিয়ে চলে যা।

একই এলাকার আমজাদ মৃধা, খইমুদ্দিনসহ আরো বেশকয়েক জন অভিযোগ করেন, আমরা চরাঞ্চলের মানুষ। আমাদের এমনিতেই আয়ের তেমন উৎস নাই। অনেক কষ্টে দিন-পাত চলে। সরকারের  বিশেষ বরাদ্দে চাল পাওয়ার তালিকায় আমাদের নাম রয়েছে। তবে ডিলারে কাছে চাল আনতে গেলে  আমাদের  তালিকায় নাম নেই বলে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে  স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার মিলেনি বলে জানান তারা।

অভিযোগের ব্যাপারে শিবালয় সদর ইউনিয়নের ডিলার মনোরঞ্চল শীল নকুল জানান, তালিকায় যাদের নাম আছে  এবং যারা কার্ডধারী সবাইকে চাল দেওয়া হচ্ছে। চাল না পাওযার অভিযোগটি  সঠিক নয়। তবে কেউ চাল না নিতে আসেন তাহলে ধরে নিতে হবে তারা কার্ড পায়নি।

এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সদস্য সচিব শাহ মো. হেদায়েতুল্লহ জানান,  তালিকায় নাম আছে তার পরও চাল পাচ্ছে না এমন অভিযোগ আমার জানা নাই। আর চাল বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রির  সঙ্গে আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হত দরিদ্রদের চাল কেউ মেরে খেলে তা মেনে নেওয়া হবে না।

এ ব্যাপারে  শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা (ইউএনও) ও  খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি  মেহেদী হাসান জানান, মৌখিক বা লিখিতভাবে আমার কাছে এরকম কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ডিলারশিপ বাদসহ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment