একজন সোজা সুইপ করলেন। আরেকজন উল্টো। ফল অবশ্য একই। দুজনই পত্রপাঠ বিদায়। আরেকটা মিল, দুবারই বোলারের নাম রবীন্দ্র জাদেজা।
প্রথাগত সুইপ করে যিনি আউট হলেন, তাঁর নাম সাকিব আল হাসান। রিভার্স সুইপ করে মুশফিকুর রহিম। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি শটই অকারণ ঝুঁকি ছাড়া আর কিছু নয়। ভারতকে বড় একটা রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার লক্ষ্যেরও অকাল সমাধি ওই দুটি আউটে।
সাকিবের উইকেটটা জাদেজার বাঁহাতি স্পিন নিল, নাকি রাগ–এটা অবশ্য একটা বড় প্রশ্ন। আম্পায়ারের সঙ্গে কী একটা নিয়ে রোহিত শর্মার লেগে গিয়েছিল, খেলা বন্ধ থাকল কিছুক্ষণ। নন স্ট্রাইকার প্রান্তে থাকা মুশফিক ওই বাদানুবাদের মাঝখানেই ছিলেন। মন দিয়ে পুরোটা শুনলেন। শেষদিকে কিছু একটা বললেনও। পুরোটা স্ট্রাইকিং প্রান্তে আড়াআড়ি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন সাকিব। ভঙ্গিটা ভিভ রিচার্ডসকে মনে করিয়ে দেওয়ার মতো।
জাদেজা আবার বোলিং শুরু করতেই যেন ভিভ রিচার্ডসই হয়ে গেলেন সাকিব! দারুণ একটা কাভার ড্রাইভে চার, পরের বলে সুইপ করে। এর পরের বলটাতেও সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ! দ্বিতীয় চারটার পরেই যে রোহিত শর্মাকে বলে মহেন্দ্র সিং ধোনি স্কয়ার লেগে নিয়ে গেছেন ধাওয়ানকে, সেটি সাকিবের খেয়াল না করার কোনো কারণ নেই। তারপরও তাহলে ওই সুইপই করলেন কেন? হয়তো ঔদ্ধত্য। ‘আমি কি আর তোদের ফিল্ড প্লেসিংয়ের ধার ধারি! দ্যাখ্, আমি আবার মারছি। পারলে ঠেকা!’
এ ধরনের ’ঔদ্ধত্য’ কাজে লেগে গেলে দারুণ ব্যাপার হয়। অনেক হাততালি পাওয়া যায়। কিন্তু বুমেরাং হয়ে গেলে? তখন সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হওয়াটাই নিয়তি। সাকিবের দিকে কিছু তির তাই ছোড়াই উচিত।
মুশফিকের রিভার্স সুইপটাও কি তাহলে কাঠগড়ায় ওঠা উচিত নয়! সাকিবের পর মিঠুনও চলে গেছেন। ৪ উইকেট পড়ে গেছে। স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ৬৫। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের মতো এখানেও মুশফিকই ভরসা। অথচ তিনি কিনা করতে গেলেন রিভার্স সুইপ!
রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার পর কেউ সমালোচিত হলেই মাইক গ্যাটিংয়ের কথা মনে হয়। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে ’কুখ্যাত’ রিভার্স সুইপটি যে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়কই মেরেছেন! সেটি ১৯৮৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার বোলিংয়ে এসেছেন। প্রথম বলটিতেই রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন গ্যাটিং। বিশ্বকাপ ফাইনাল বলেই গ্যাটিংয়ের ওই রিভার্স সুইপ এখনো সবাই মনে রেখেছে। ইংল্যান্ড ওই ফাইনালে হেরেছিল, এটাও অবশ্য একটা কারণ। মুশফিকের এই রিভার্স সুইপের এতটা বিখ্যাত (কুখ্যাত-ও বলতে পারেন) হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই ম্যাচ কদিন পরই মানুষ ভুলে যাবে। আর ১৯৮৭ সালে রিভার্স সুইপ করে আউট হওয়া যেমন ’অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হতো, অনেক দিনই আর তা নয়। এটি এখন বলতে গেলে ক্রিকেটের নিয়মিত শটের মধ্যেই পড়ে। তবে সেটিতে ঝুঁকি সেই আগের মতোই আছে। সেটি খেলার সময়-অসময়ও আছে।
এই টুর্নামেন্টে যাঁর আগের ইনিংসটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা, সেই মুশফিকুর রহিম সেটিই কাল বুঝলেন না। ৪৪২ দিন পর ওয়ানডেতে ফেরা রবীন্দ্র জাদেজা অবশ্যই কোনো অভিযোগ করবেন না এ নিয়ে। সাকিব-মুশফিকের মাঝখানে মিঠুনের উইকেটটিও তাঁর। পরে মোসাদ্দেকেরটিও যোগ করে ২৯ রানে তাঁর ৪ উইকেট। প্রত্যাবর্তনের গল্প এভাবেই লিখতে হয়!